ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ডেসটিনির এক দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রতি রোববার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৭
ডেসটিনির এক দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রতি রোববার

ঢাকা: ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ডিএমসিএসএল) দুর্নীতির মামলায় প্রতি রোববার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামী ২৬ নভেম্বর।

দুই মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ও ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের মোট চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ৫১ আসামির বিরুদ্ধে।

মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে।

রোববার (০৫ নভেম্বর) ডিএমসিএসএল দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মো. তৌফিকুল ইসলামকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। জেরা আগামী রোববার (১২ নভেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করে আদালত জানান, প্রতি রোববার এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।  

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের বিশেষ পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম।

গত বছরের ২৪ আগস্ট গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ওই দুই দুর্নীতির মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ৫১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত। একইসঙ্গে মামলা দু’টি বিচারের জন্য ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পাঠান।

দুই মামলার মোট ৫১ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন ৫ জন- ডেসটিনির এমডি মো রফিকুল আমীন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, জিয়াউল হক মোল্লা ও সাঈদুল ইসলাম খান রুবেল। জামিনে আছেন ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ।

পলাতক ৪৫ আসামি হলেন- ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এস এম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মো. আকবর হোসেন সুমন, সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. শফিউল ইসলাম, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, এস এম আহসানুল কবির বিপ্লব, এ এইচ এম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, জেসমিন আক্তার মিলন ও মো. শফিকুল হক।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দু’টি করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ০৫ মে আদালতে দু’টি পৃথক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় দুদক। চার্জশিটে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি দুর্নীতির মামলায় ২১ জন ও ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেড দুর্নীতির মামলার ৪৬ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমীন দুই মামলারই আসামি। আরও কয়েকজন দুই মামলায়ই আসামি থাকায় মোট আসামির সংখ্যা ৫১ জন।

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে সোসাইটির বোর্ড সভায় অনুমতি না নিয়ে সদস্যদের অগোচরে প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন। ডেসটিনির পরিচালকরা ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন, যা আইনের পরিপন্থী।

এর মধ্যে একটি অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ২৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। এ টাকা ঋণ, ডিভিডেন্ট ও কমিশন আকারে সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজেদের ব্যাংক হিসেবে জমা করেন আসামিরা। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

অন্য অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন তারা। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।