ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভুয়া চিকিৎসক রাজনকে গ্রেফতারের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৭
ভুয়া চিকিৎসক রাজনকে গ্রেফতারের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: সন্তান প্রসবের সময় অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিনমাস পর পটুয়াখালীর প্রসূতি মা মাকসুদা বেগমের পেট থেকে গজ বের করার ঘটনায় চিকিৎসক রাজন দাসের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে হাইকোর্টে হাজির করতে পটুয়াখালীর বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (০৬ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

সংশ্লিষ্ট পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম। চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদারের (মিশু সিকদার) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আইলাদ হোসেন।

পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে দাখিল করা প্রতিবেদনে রাজন দাসের চিকিৎসক লাইসেন্সটি ভুয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেফতার করে তাকে আদালতে হাজির করতে বলেছেন’।

‘ওইদিন নিরাময় ক্লিনিকের মালিক ও ভুয়া লাইসেন্সধারী চিকিৎসক রাজন দাসের সহকারীকেও হাইকোর্টে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’।

একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরদিন ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা।

শহিদ উল্লা জানান, ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিনমাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে প্রসূতি মাকসুদা বেগমের (২৫) পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে। মুমূর্ষু ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালিতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে’।
 
‘মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক’।
 
‘মাকসুদার মা রোকেয়া বেগম বলেন, গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদাকে নিরাময় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে তার একটি মেয়ে হয়। কয়েকদিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। একমাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়’।

‘গত জুনে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন আলট্রাসনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়েনি। এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়’।

এ ঘটনায় ২৩ জুলাই পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে রুল জারি করেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। ০১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদেরকে।

রুলে ওই ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ৯ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। সে প্রতিবেদনেই চিকিৎসক রাজন দাসের লাইসেন্সটি ভুয়া হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।