ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘তাহলে দুদক বসে বসে কি করেছে?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৭
‘তাহলে দুদক বসে বসে কি করেছে?’ সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: ১৮০ দিনের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরেও বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিষয়ক মামলার তদন্ত রিপোর্ট না দেওয়ায় প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বসে বসে কি করেছে?’

এছাড়াও আদালত দুদকের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার অভাবের কথাও বলেছেন বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
 
বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় আসামি সেলিমের জামিনের আবেদনের শুনানিকালে বুধবার (০৮ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

 
 
আদালতে আসামি সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
 
পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের অসুবিধার কথা আদালতের কাছে বলেছি। কিন্তু আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট। কারণ, দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিতে ছিল ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে। যেটি সর্বশেষ সংশোধনী হয়ে এসেছে ১৮০ দিন। সেখানে দুই বছর অতিক্রম হয়েছে। আদালতের প্রশ্ন ছিল- তাহলে দুদক বসে বসে কি করেছে?’
 
আদালতের নির্দেশনা দুদক প্রতিপালন করছে উল্লেখ করে খুরশীদ আলম খান বলেন, চার্জশিট (বেসিক ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলা) অচিরেই হয়ে যাবে। ৪৮টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলা ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়ার জন্য পেন্ডিং আছে। দুদকের চেয়ারম্যান সেমিনারে যোগ দিতে দেশের বাইরে গেছেন। সামনের সপ্তাহে এলে আশা করি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এছাড়া হাইকোর্ট যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, দুদক সেগুলো খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণের আলোকেই বাকি কাজ সম্পাদন করা হবে’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছেন, দুদকের স্বচ্ছতার অভাব, দক্ষতার অভাব। আমরা সেটা মেনেই নিচ্ছি। দক্ষতা অবশ্যই আমরা বাড়াবো। স্বচ্ছতা আছে, স্বচ্ছতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবো। আদালতের প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আদালতের নির্দেশ পালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না’।
 
‘বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু কেথায় সেটা আপনাদের যেমন প্রশ্ন, আদালতেরও প্রশ্ন, সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন। আব্দুল হাই বাচ্চুর একজন সহ আসামি শিপন আহমেদ, সেটা দুদক তলিয়ে দেখছে এবং বোর্ডের সদস্যদের নোটিশ দিচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অচিরেই দুদক ৪৮টি মামলার চার্জশিট দিতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি’।
 
আব্দুল হাই বাচ্চুকে মামলায় অন্তর্ভূক্ত করতে দুদকের বাধা কোথায় জানতে চাইলে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুদকের কোনো বাধা নেই। দুদক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মামলা করে। আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে যদি ক্রেডিবল অ্যাভিডেন্স পাই, তাহলে আব্দুল হাই বাচ্চু হোক আর যেই হোক, অবশ্যই তিনি মামলার আসামি হবেন। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ক্রেডিবল অ্যাভিডেন্স থাকতে হবে’।
 
বেসিক ব্যাংকের বোর্ডের যে পরিচালকরা ঋণের অনুমোদন দিয়েছিলেন, তাদের কেন আসামি করা হয়নি?- এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী ফখরুল ইসলাম মামলার আসামি। তিনি কারাগারে আছেন। বাকি বোর্ড অব ডিরেক্টর যারা আছেন, বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ওই সময়টায় তাদের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। যদি পাওয়া যায়, অবশ্যই তারা আসামি হবেন’।
 
এ বিষয়টি তদন্ত করতে কতোদিন লাগতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বেশিদিন লাগবে না। খুব সহসাই এটি হয়ে যাবে’।
 
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আজকের মামলার আসামি সেলিম বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঋণ পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। ওই কমিটিতে ১৫-১৬ জন করে সদস্য থাকেন। কোনো ঋণ প্রস্তাবই তারা করেননি। প্রত্যেকটি ঋণ প্রস্তাবে তারা নেতিবাচক পর্যালোচনা দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি কমিটি থেকে একজন বা দু’জন সদস্যকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেড় বছর দুই বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন’।
 
তিনি বলেন, ‘যেখানে তারা স্পষ্টত ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দেননি। তা সত্ত্বেও যেহেতু ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাহলে তো ওপরের লোকজনই ঋণ দিয়েছেন। ঋণ দেওয়ার অনুমোদনের জন্য কোনো প্রস্তাব নেই। যিনি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেননি, তাকে আপনারা আটকে রেখেছেন, আর অনুমোদনের প্রস্তাব না থাকা সত্ত্বেও ওপরের কর্মকর্তারা যারা, বোর্ড সদস্য যারা ঋণ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে একটি মামলাও হয়নি। এগুলোই বিভিন্ন সময়ের কথাবার্তায় উঠে এসেছে’।
 
শাহদীন মালিকের মতে, ‘জিনিসটা খুবই খামখেয়ালিভাবে হচ্ছে। খুবই বেআইনিভাবে হচ্ছে। এর পেছনে যারা আসল হোতা তারা সম্পূর্ণ আড়ালে। এই মামলাগুলো ফাইল হয়েছে দুই বছর আগে। আমার মনে হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে দুদকের কোনো উৎসাহ নেই। আর যারা এক অর্থে চুনোপুটি এবং যারা সাধারণ কর্মকর্তা, যারা না করেছেন তাদেরকে ধরে ধরে জেলে রাখা হচ্ছে’।
 
আসামিপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘যেহেতু দুই বছর হয়ে গেছে, এতোদিন ধরে যখন বড় রুই কাতলাদের কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি তার থেকে আদালতের একটি মন্তব্য ছিল এ রকম- হয় দুদকের অদক্ষতা অথবা পক্ষপাতিত্ব বা এমনটা যদি কেউ মনে করে এতো দীর্ঘসূত্রতার কারণে কেউ যদি মনে করে, তাদেরকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, এরকমটা মনে করলে তা অযৌক্তিক মনে করা হবে না। এ ধরনের মন্তব্য আদালত করেছেন’।
 
শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমি দুদকের মামলা করতে গিয়ে খুবই হতাশ হয়েছি। এখানে কোনো দক্ষতা-যোগ্যতা নেই। এসব দুর্নীতি তো দেশে অবশ্যই হচ্ছে। যারা দুর্নীতি করছে, তাদের ধরার মতো, আইনের আওতায় আনার মতো দক্ষতা-যোগতা এবং নিষ্ঠা থাকতে হবে। আমারও মনে হয়, সেটার অভাব আছে। হাইকোর্ট বলেছেন, একই মামলায় আপনারা কাউকে ধরবেন, কাউকে ধরবেন না- এটাতো পিক অ্যান্ড চুজ’।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।