এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে আবেদন আহ্বান করে বিটিআরসির দেওয়া বিজ্ঞপ্তি এবং ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০০৮ এর ৪.০২, ৪.০৬(৩) নীতি ২০১৭ সালে প্রণীত নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং যুগ্ম-সচিব, বিটিআরসি, বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং ডিভিশনের মহাপরিচালক, পরিচালক ও বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম ডিভিশনের পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করে বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। সঙ্গে ছিলেন রমজান আলী সিকদার ও ব্যারিস্টার সাইফুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
পরে সাইফুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে বিটিআরসির দেওয়া দু’টি বিজ্ঞপ্তি এবং ২০১৭ সালে প্রণীত নীতিমালা ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০০৮ এর ৪.০২ ও ৪.০৬(৩) এর পরিপন্থি। কারণ ২০০৮ সালের নীতিমালার ৪.০২ নীতিতে বলা আছে বেসরকারি তিন জন/প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি এক প্রতিষ্ঠানকে ফোর-জি লাইসেন্স দেওয়া যাবে। আবার ৪.৬ (৩) নীতিতে বলা আছে কোনো মোবাইল অপারেটর এ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয়। এ কারণে বিটিআরসির বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকার এবং বিটিআরসির পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
গত ৪ ডিসেম্বর বিশেষ কমিশন সভায় দুই গাইডলাইন প্রকাশ ও আবেদন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই দিন বিটিআরসির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের পর ২৫ জানুয়ারি যোগ্য আবেদনকারীর তালিকা প্রকাশের কথা জানায় বিটিআরসি।
তারা জানায়, ২৯ জানুয়ারি নিলামের আলোচনা, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিড আর্নেস্ট মানি প্রদান, ৭ ফেব্রুয়ারি নিলামের চিঠি প্রদান, ১২ ফেব্রুয়ারি মক নিলাম, ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলাম এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুই গাইডলাইনের অনুমোদন দেন।
ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করে ফোর-জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন এবং তরঙ্গ নিলাম গাইডলাইন অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে অপারেটররা যে ২৩টি বিষয় বিবেচনার অনুরোধ করেছিল, তার মধ্যে ২২টি সম্পূর্ণভাবে এবং ২৩ নম্বরটি আংশিকভাবে বিবেচনা করেছি।
‘ফোরজি লাইসেন্স আবেদন ফি আগে ছিল ৫ লাখ টাকা, এখনও তা-ই আছে। লাইসেন্স ইক্যুইজেশন ফি পূর্বে ছিল ১৫ কোটি, সেটি এখন ১০ কোটি টাকা। বার্ষিক লাইসেন্স ফি সাড়ে সাত কোটি থেকে কমিয়ে ৫ কোটি টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি ১৫০ কোটি টাকাই রয়েছে। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কনভার্সন ফি ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টেজের তরঙ্গ এক ধাপে রূপান্তর করলে ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আংশিক রূপান্তর করলে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
প্রাথমিকভাবে ফোর-জির ডাটা স্পিড ২০ এমবি (মেগাবাইটস পার সেকেন্ড) রাখা হয়েছে। বিটিআরসি সময়ে সময়ে স্পিড পরিবর্তন করতে পারবে সেজন্য বিধান রাখা। এটি আগে ছিল ১০০ এমবি।
অপারেটরদের কল রেকর্ডস সংরক্ষণের সময়সীমা কমিয়ে আনার অনুরোধ ছিল, সেটি তিন বছরের পরিবর্তে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই বছর করা হয়েছে।
ভ্যাট ও ট্যাক্সের বিষয়ে অপারেটরদের অনুরোধে বিটিআরসিতে প্রদানের বাধ্যবাধকতা না রেখে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সিএফ ক্যালকুলেশন করার বিধান অ্যাকটিভ সাবস্ক্রাইবারের ভিত্তিতে করার জন্য তাদের প্রস্তাব ছিল, সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। আগে ছিল তিন মাস পর পর, সাবস্ক্রাইবার কতজন থাকবেন সেটির ভিত্তিতে বিবেচনা করা ছিল, উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে তাদের অনুরোধটি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিটিআরসিকে অবহিত ও অনুমোদন নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কোন কোন সেবা অপারেটররা নেবে- এ বিষয়টি রহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮/আপডেট ১৩১৭ ঘণ্টা
ইএস/এইচএ/