আদালতের তলবে হাজিরের পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-ই-আজম মিয়া ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত সাহাকে ভর্ৎসনা করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।
পরে ফরহাদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু এটি পত্রিকায় প্রকাশ পায় ১০ ডিসেম্বর। ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত খবরটি আমি আদালতের নজরে আনি।
আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ রুল জারি করে আদালত পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার বিধান ত্রিপুরা, বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর-ই-আজম মিয়া ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত সাহাকে ১৫ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেন। পাশাপাশি বিমানবন্দর থানার ওসি ও এসআইকে ২২ জানুয়ারি তলব করেন।
কিন্তু ওইদিন স্বরস্বতী পূজার কারণে আদালতে ছুটি ঘোষণা করায় আজ তারা হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালত ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন।
আদালত বলেছেন, বিমানবন্দর হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকা এবং সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। ওখানে আপনি অস্ত্র নিয়ে যাবেন কেন? আরেকটা বিষয় পুলিশ অস্ত্রের লাইসেন্স যাচাই না করেই আসামিকে তার বাবার জিম্মায় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। অন্য কেউ হলে পুলিশ এভাবে ছেড়ে দিত কিনা?
এই ঘটনার পর এসআই সুকান্তর বোন ফারমার্স ব্যাংকে চাকরি পান। এ ঘটনার উল্লেখ করে আদালত দুই পুলিশ কর্তকর্তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন, তাহলে কনসিকোয়েন্টা কী দাঁড়ালো? এ ঘটনার পরই আপনার বোনের চাকরি হয়েছে। তার মানে তাদের সঙ্গে আপনার (এসআই) এক ধরনের সেটেলমেন্ট হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতি বিমানবন্দরে অস্ত্রগুলিসহ এক ব্যক্তিকে আটকের পর নিয়মিত মামলায় আদালতে না পাঠিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম সুকান্ত সাহা। তিনি বিমানবন্দর থানায় সাব ইন্সেপেক্টর (এসআই) পদে কর্মরত আছেন। আটক ব্যক্তি ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আজমত রহমান এবং তার পিতা ড. আতাহার উদ্দিন ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের এসআই সুকান্ত সাহ মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এবং ছোট বোনকে ওই ব্যাংকে চাকরি দেয়ার বিনিময়ে আটকের পর ওই রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হযেছে। বিষয়টি পুলিশের উচ্চ মহলে জানাজানি হলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হংকংগামীযাত্রী আজমত রহমান (পাসপোর্ট নং-বিএম-০০৩৬৩৯১) গেইট নং-৩, এইচ এল-৩ এর স্ক্যানিং মেশিন অতিক্রম করে বোর্ডিং ব্রীজ ৬ দিয়ে পার হওয়ার সময় নিরাপত্তা তল্লাশীর মুখে পড়েন। এসময় তার সাথে থাকা ল্যাপটপ ব্যাগ স্ক্যানিং করে একটি ওয়ালথার পিস্তল (নং ০০২৪৯৪) ও ৮ রাউন্ড তাজা গুলি দেখতে পান নিরাপত্তিকর্মীরা। সাথে সাথে বিষয়টি বিমান বন্দরের নিরাপত্তা শাখাকে জানানো হলে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
এরপর বিমান বন্দরের উপ-নিরাপত্তা কর্মকর্ত্ (ডিএসও) আনোয়ারা বেগম ঐ যাত্রীকে অস্ত্রগুলিসহ আটক দেখিয়ে ঐ রাতেই বিমানবন্দর থানায় সর্পোদ করেন। তিনি এ ব্যপারে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ সেটিকে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) হিসেবে গ্রহন করে (নং-৭৫৪, তাং১৬-০২-১৭ইং)। পুলিশ ঐ যাত্রীকে আটক দেখায় এরপর ঐ যাত্রীকে ছাড়ানোসহ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য গোটা রাতজুড়ে বিভিন্ন মহলে দেন দরবার শুরু হয়। পরদিন ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়। পুলিশ তদবিরের মুখে ওই যাত্রীকে তার বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেয়ার সময় ঘটনায় থানার জিডি বইয়ে (নং ৭৬৯) উল্লেখ করেন যাত্রী আজমত রহমানকে তার পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ