মুহূর্তেই প্রধান বিচারপতির ‘অনুভূতির’ চিত্রধারণ করতে প্রস্তুত থাকা বেসরকারি টেলিভিশন ক্যামেরাগুলো যেন অবনত। তার বিনয়ে যেন আরও অবনত হয়ে গেলো সাংবাদিকদের বুমগুলোও।
দায়িত্বগ্রহণের পরদিনই রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। স্মৃতিসৌধে তার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সংবাদকর্মীরা অনুভূতি জানতে চাইলে প্রধান বিচারপতির কণ্ঠে বাজে বিনয়ের এমন সুর।
মাহফুজুর রহমান নিপু নামে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী বাংলানিউজকে জানান, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পূর্বসূরী সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েই ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি জাতীয় স্মৃতিসৌধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত এবং হাইকোর্টের দায়িত্বরত ৯০ বিচারপতি নিয়ে আসেন। সেদিন তিনি একাত্তরের বীরশহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। সেই অভিজ্ঞতায় গণমাধ্যমকর্মীরা নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির অনুভূতি জানতে চাইলে এই বক্তব্য আসে নয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে।
অবশ্য জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির পৌঁছানোর আগেই দেশের শীর্ষ বিচারাঙ্গনের রাষ্ট্রাচার (প্রটোকল) বিভাগের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন, প্রধান বিচারপতি তার পূর্বসূরীর পথে হাঁটবেন না। মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। তার প্রতিফলন যেমন দেখা গেলো, তেমনি স্মৃতিসৌধে সহকর্মীদের মর্যাদা সমুন্নত রেখে তাদের সম্মানিত করতেও বেশ সর্তক দেখা গেলো প্রধান বিচারপতিকে।
ফুলের ‘বরণডালা’ সাজিয়ে যখন প্রধান বিচারপতিকে অভ্যর্থনা জানাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা তার দিকে এগিয়ে যান, তখন তিনি দু’পা পিছিয়ে যান। অপেক্ষা করেন সহকর্মী আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জন্য। তারা এসে পৌঁছালে সবাইকে নিয়ে তবেই ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি।
‘কী বুঝলেন?’ পেছনে থাকা এক সরকারি কর্মকর্তার এমন প্রশ্নের জবাবে তার সহকর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘স্পষ্ট বার্তা প্রধান বিচারপতির। তিনি জানেন কী করে অন্যকে সম্মান দিতে হয়। সবাইকে নিয়েই যে তিনি শীর্ষ বিচারাঙ্গন সাজাবেন- এটার স্পষ্ট বার্তা দিয়ে গেলেন প্রধান বিচারপতি। ’
স্মৃতিসৌধের বেদীতে বীরশহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে প্রধান বিচারপতি এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে সই করেন। সেখানে তিনি জীবন দিয়ে হলেও শহীদদের রেখে যাওয়া লাল-সবুজের পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেন।
দেশের প্রধান বিচারপতি লেখেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাত কোটি বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো দেশ মাতৃকার সংগ্রামে। ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো লাল সবুজের পতাকা। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি বীরশহীদদের মহান আত্মত্যাগকে। শহীদদের রেখে যাওয়া পতাকার মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও আমরা রক্ষা করবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এইচএ/