তিনি বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলহোতা খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমান। এই হামলায় জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার যে যড়যন্ত্র হয়েছিল, তার নায়ক ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি সরকারের ওই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন আরও ১১ আসামি।
বুধবার (১০ অক্টোবর) পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজকে যে এই মামলা শেষ হয়েছে, তাতে সন্তোষ্ট। আর রায়ের কাগজপত্র পাওয়ার পরে আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো, এই রায়ে তারেক রহমান এবং আরও দু’জন- কায়কোবাদ ও হারিছ চৌধুরীকে যে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে, সেটার জন্য আমরা উচ্চতর আদালতে গিয়ে তাদের ফাঁসির জন্য (এনহ্যান্সমেন্ট) আপিল করবো কি-না।
আপিলের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত রায় না পাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত যদি বলি আপিল করবো, আমার মনে হয় এটা প্রি-ম্যাচিউরড। আমরা রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখার পরে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পলাতকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করবো, এটা অত্যন্ত নৃশংস একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি, সেই রকম এই মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, হত্যাকারী বলে আদালত রায় দিয়েছেন এবং ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমরা নিশ্চই করবো।
আইনমন্ত্রী বলেন, আজকে ১৪ বছর অপেক্ষার পরে বিচারিক আদালেতে এই মামলার রায় হয়েছে। আমরা তার জন্য সন্তোষ্ট। আমরা আশা করেছিলাম অপরাধের গুরুত্ব ভেবে তারেক রহমান যে এই ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক তার ফাঁসি হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। সেই কারণে, তাকে ফাঁসি দেওয়া হয় নাই সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আমরা এনহ্যান্সমেন্টের জন্য যাবো কি-না।
এক যুগ আগের ওই বর্বরোচিত হামলার ঘটনার বিচার না হওয়া নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তারা যতোদিন ক্ষমতায় ছিল ২০০৬ সালের শেষ পর্যন্ত, এই মামলাটি ভিন্ন ধারায় প্রভাবিত করার জন্য একটা হীন ষড়যন্ত্র করা হয় এবং সেই অবস্থায় ‘জজ মিয়া নাটক’ সাজানো হয়। তারপরে আল্লাহর ইচ্ছায় যখন তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়, সেই অবস্থায় তাদের ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে এবং ইয়াজ উদ্দিনের সেই নাটকের পরে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখন জজ মিয়া নাটকের ব্যাপারটা উদঘাটিত হলে আবার তদন্ত করা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের পর যারা যারা এই মামলায় ষড়যন্ত্র ও হত্যার কাজে এবং পরে আলামত গুম করার জন্য দায়ী তাদের বিচারে সোপর্দ করা হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার সবগুলো সুষ্ঠু এবং ডিউ প্রসেস ফলো করে বিচার কাজ শেষ করা হয়েছে এবং সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলা শেষ করা হলো।
‘আজকে আমরা মনে করি বাংলাদেশের জনগণ বিচার পেয়েছে। তার কারণ হচ্ছে, কোনো মামলাই এমনকি জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায়ও বিএনপির আমলে বিচার হয়নি। বিএনপি কোনো দিনই আইনের শাসন মানে না। কোনো দিনই আইনের শাসনের ধারাবাহিকতা, যে এইসব মামলার বিচার হওয়ার উচিত সেটা মানে নাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
এমআইএইচ/টিএ