বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ও এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
‘আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ আবেদনটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে,’ যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কানাডায় নিবন্ধিত নাইকো আমাদের দেশের কয়েকটি গ্যাসফিল্ড লিজ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। ২০০২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ছাতক গ্যাসফিল্ডটি একটি ভার্জিন গ্যাসফিল্ড (গ্যাসে পরিপূর্ণ) ছিল বলে বাপেক্স এবং আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলা অভিমত দিয়ে আসছিল।
‘কিন্তু নাইকো নানারকম অসৎ পন্থা অবলম্বন করে আমাদের দেশের তৎকালীন কিছু ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে বিশেষভাবে হাওয়া ভবনকে প্রভাবিত করে পূর্ব ছাতক গ্যাসফিল্ডটি গ্রহণ করে। সে সময় একটি পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড হিসেবে তাদের এটি দেওয়া হয়েছিল। আসলে এটা পরিত্যক্ত ছিল না। ’
তিনি বলেন, পরবর্তীতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। তারা তদন্তে প্রমাণ পায় যে এই নাইকো তার দেশ থেকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়েছিল। সে টাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষ হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গত বছর আমি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম, তারা তদন্ত করে যে তথ্যগুলো পেয়েছে সেগুলো আমাদের পাঠানোর জন্য। আমাদের এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে মিউচ্যুয়াল অ্যাসিসটেন্সের আওতায় সে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, এই তদন্তে তারা পেয়েছেন, টাকা কীভাবে কানাডা থেকে অন্যান্য দেশে বিশেষ করে ক্লেমেন আইল্যান্ড থেকে সুইজারল্যান্ড এবং সেখান থেকে ইউএসএ, তারপর বাংলাদেশে এনে ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় তারেক রহমানকে আসামি করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এখনও করা হয়নি।
‘এই প্রতিবেদনে গিয়াস উদ্দীন আল মামুনের নাম এসেছে এভাবে যে, তিনি তারেক রহমানের বন্ধু ছিলেন তার প্রভূত ক্ষমতা ছিলো এবং তার মাধ্যমেই এই লেনদেন হয়েছে। ’
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেকেই এই ঘটনায় তাকে সহযোগিতা করেছেন। ঘুষ প্রদানের ব্যাপারে তাদেরও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ০৯ ডিসেম্বরে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
পরে ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
খালেদা ছাড়াও এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
আসামিদের মধ্যে মিয়া ময়নুল হক, কাশেম শরীফ ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
ইএস/এমএ