বিএনপির পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিতে করা আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) হাইকোর্ট এমন অভিমত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি বলেন, সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন, আবেদনকারী জামিনে আছেন, জরিমানার আদেশ স্থগিত হয়েছে— এসব দণ্ড বা সাজা স্থগিতের যুক্তি হতে পারে না বলে জানিয়েছেন আদালত।
যদি আপিল বিভাগে আবেদন করে তখন কি হবে- এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, যদি ওনারা (দণ্ডিতরা) আপিল বিভাগে যান, আর আপিল বিভাগ যদি ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
আদালতের এ অভিমতের কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু খালেদা জিয়া কেন, দণ্ডিত কেউই অংশ নিতে পারবেন না। একথা তো আমি আগেও বলেছি। উনি সম্পূর্ণ খালাস পেলে অথবা সেনটেন্স বাতিল করে দিলে, তখন উনি পারবেন।
সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে। ’
দুর্নীতির অভিযোগে প্রাপ্ত দণ্ড (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে করা বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লা আমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরিফুল ইসলাম। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী ।
ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও আব্দুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, ও ব্যারিস্টার একেএম ফখরুল ইসলাম।
মশিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, আপিলের পর জামিন নিয়ে জরিমানা স্থগিত হলেও কারাদণ্ড স্থগিত হয়নি। তাই সাজা সাসপেন্ড চেয়ে আবেদন করেছেন তারা। পাঁচটি আবেদনের ওপর সোমবার শুনানি শেষ হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতে আমি বলেছিলাম, ফৌজদারি আদালত, বিশেষ করে ফৌজদারি আপিল আদালত তাদের সাজা (সেন্টেন্স) স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু কনভিটশন মনে তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটাকে স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।
আর বিশেষ করে আমি সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, এই সমস্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পরবেন না বা সংসদ সদস্য হিসেবেও থাকতে পারবেন না।
যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি লাভের পরে পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়, যে ব্যক্তিরা দরখাস্ত করেছেন তারা সবাই দণ্ডিত। এরা তাদের দণ্ড থেকে এখনও মুক্তি লাভ করেননি। এবং তাদের পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি।
‘এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ডকে স্থগিত করে তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয় তবে তা হবে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আমাদের এ বক্তব্যগুলো আদালত গ্রহণ করে তাদের দরখাস্তগুলো খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকবে না বলে আমি মনে করি। ’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে বলেন, নিশ্চয়ই, এটা তো সাংবিধানিক বিধিবিধান। কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বা সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পার্লামেন্টে থাকতে পারবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তিলাভের পরে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়।
‘এখানে কন্ডিশন হলো, বেসিক্যালি দুইটা। তিনি যদি দণ্ডিত হন পারবেন না। ইতোমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন বা তার সাজা যদি বাতিল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বাতিলের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি পারবেন না। মানে দুটো প্রতিবন্ধকতা তার আছে। এটা সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা। কাজেই যেকোনো আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতাকে ওভারকাম করতে পারেন না, এটাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না। ’
হাইকোর্ট আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। এখন তারা যদি আপিল করে, তবে আপিল বিভাগে আমরা একই বক্তব্য দেব।
খালেদা জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, তাহলে কি তাকে নির্বাচনের জন্য ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে? এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধান তো তাই বলে। আর উনি যদি খালাস পেয়ে যান তারপরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৮
ইএস/এএ