বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন উপস্থাপন করা হয়। আবেদনটি উপস্থান করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপূরী, দলটির সমাজ কল্যাণ সচিব মো. আলী হোসেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এর সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মো. এমদাদুল হক ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াত ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে’ নির্বাচন চার ব্যক্তির করা আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ১৮ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আবেদনকারীরা ইসিতে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওইচিঠিতে বলা হয়েছে,
‘বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী মহামান্য হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থে রিট মামলা দায়ের করি। উক্ত মোকদ্দমায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ সন্তুষ্ট হয়ে রুল অ্যাবস্যুলিট করেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন।
ইদানিং বিভিন্ন পত্র বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমি জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোন রাজনৈতিক দল এর প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন যা অত্র ইলেকশন কমিশন কৃর্তৃক গ্রহীত হয় এবং তাদেরকে বৈধ প্রর্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে এর মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন, যা অদ্যবধি বহাল আছে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইট থেকে তাদের রাজনৈতিক দলের ২৫ জন প্রার্থীর তথ্য-উপাত্ত এবং তদসংক্রান্তে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট দাখিল পূর্বক আপনার নিকট সবিনয়ে নিবেদন করছি রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উক্ত ২৫ প্রার্থী প্রার্থীতা বাতিল পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে আপনার সদয় মর্জি হয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রার্থনা করছি। ’
এরপর ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব(আইন) মো. সেলিম মিয়া আবেদনকারীদের একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, আবেদনটি ৪১/২০১৮ তম সভায় আলোচনাে হয়। আলোচনা অন্তে আপনার আবেদনে উল্লিখিত ২৫ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের আইনগত কোনো সুযোগ না থাকায় নির্বাচন কমিশন আপনার আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তারা হাইকোর্টে ফের আবেদন করেন। আবেদনে ইসির ২৪ তারিখের চিঠি কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ জনকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টে ১৭ ডিসেম্বরের শুনানিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০০৯ সালে রিট করা হয়। ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে।
হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধান পরিপন্থী। এ রায় এখনো বহাল রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই সেহেতু ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এরপরও জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে ইসি হাইকোর্টের রায় ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বিভিন্ন বিধির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮
ইএস/এসএইচ