ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অবশেষে স্ত্রী-সন্তানের কাছে তুষার দাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৯
অবশেষে স্ত্রী-সন্তানের কাছে তুষার দাস স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে তুষার দাস। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: হাইকোর্টের জামিনাদেশের পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ১৪ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত তুষার দাস ওরফে রাজ।

বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে তুষার মুক্তি পান বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শিশির মো. মনির। এসময় কারা ফটকে তার স্ত্রী-সন্তান ও বাবা উপস্থিত ছিলেন।

হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে ব্রাহ্মণ মেয়ে সুস্মিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করার পর নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন তার শাশুড়ি।

গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) তুষারের ১৪ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিনের আদেশ দেন।

তুষারের জামিনের পর সুস্মিতা সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আমাকে ন্যায়বিচার দিয়েছে। জামিন আদেশে ছোট্ট মেয়েটা ওর বাবাকে কাছে পাবে। আমি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তুষারকে বিয়ে করেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনা করে না করে সবাইকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আমার বাবাকে বলতে চাই—তোমরা ভালো ও সুখে থাকো। যদি পারো আমার কাছে এসো, এসে সবকিছু মেনে নাও। কারণ, ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু বর্ণ নেই।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুরের সুস্মিতা ও তুষার ভালবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু এখনো এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সুস্মিতার বাবা-মা। মেয়ে নাবালিকা-এ অভিযোগে তার মা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। এ মামলায় তুষারকে গত ২৩ জুলাই ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। কিন্তু, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তুষারকে খালাস দেওয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। আসামি শিশু সুস্মিতাকে বিয়ে করবেন- এ আশ্বাস দিয়ে অপহরণ করেছেন, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

বিচারক রায়ে বলেন, আসামি তুষার ভিকটিমকে ধর্ষণ করেছে মর্মে চাক্ষুস সাক্ষী নেই। ভিকটিমের সঙ্গে আসামির দৈহিক মেলামেশা হয়েছিলো কি-না এ মর্মে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে, তিনি তার জবানবন্দির শেষের দিকে বলেন, তিনি (সুস্মিতা) স্বেচ্ছায় আসামিকে বিয়ে করেছেন ও বিয়ের পর তার সঙ্গে ১১ দিন ঘর-সংসার করেছেন। উভয়পক্ষের স্বীকৃতমতে গত ৩ মে সুস্মিতা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এ সন্তানের জন্মতারিখ পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায়, জন্মের কমপক্ষে ১০ মাস ১০ দিন আগে সে তার মায়ের গর্ভে এসেছিল।

‘উপরের আলোচনায় এ কথা পরিষ্কার যে, আসামি তুষার ভিকটিম সুস্মিতার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কিন্তু, সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অপরাধ কি-না, রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় তাকে ওই ধারায় সাজা দেওয়া যায় না। ’

রায়ের পর গত ২৩ জুলাই তুষারকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি আপিল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৯
ইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।