ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সংরক্ষিত বনে আহত বানরদের সুচিকিৎসায় নোটিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২০
সংরক্ষিত বনে আহত বানরদের সুচিকিৎসায় নোটিশ

ঢাকা: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সন্তোষপুর বনাঞ্চলের জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ, অনতিবিলম্বে অপসারণ এবং বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত বানরদের সুচিকিৎসা ও পুর্নবাসনের দাবি জানিয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
 

বিদ্যুৎ খনিজ ও জ্বালানি সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবরে পিপল ফর এনিমেল ফাউন্ডেশন এর পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
 
বৃহস্পতিবার তিনি জানান, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সন্তোষপুর বনাঞ্চলের জাতীয় উদ্যানের ভেতরে দিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তরে জড়িয়ে গুরুতর আহত ও নিহত হচ্ছে অসংখ্য বানর-এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অথচ বানরসহ জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণীর জীবন হুমকির মধ্যে। তাই এ নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।    

 
শিহাব উদ্দিন খান বলেন,  ৪ জানুয়ারি `বনের ভেতর বিদ্যুতের তারে ঝলসে যাচ্ছে বানর’শীর্ষক শিরোনামে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
 
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে রয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক বানর। বানরগুলো ‘সামাজিক বানর’ হিসেবেই পরিচিত। বন বিভাগের নীতিমালা অনুসরণ না করে বনের ভেতরে কভারবিহীন তারে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ায় তারে জড়িয়ে পুড়ে ঝলসে যাচ্ছে সন্তোষপুর বনাঞ্চলের বানরগুলো।

প্রতিদিনই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বানরগুলো মুখ, হাত, পা ও শরীর পুড়ে ঝলসে গিয়ে আহত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৮ থেকে ১০টি বানর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পুড়ে আহত হয়েছে। বানর সংঘবদ্ধ প্রাণী। কোনো বানর বিদ্যুতায়িত হলে দলবেঁধে ছুটে বনের অন্য বানরগুলো।

এতে হুমকির মুখে পড়েছে সন্তোষপুরের নিরীহ এই বন্যপ্রাণীরা। ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসকে বন এলাকায় সিলভারের তারের পরিবর্তে কভারিং ক্যাবল লাগানোর জন্য লিখিতভাবে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সন্তোষপুর বনের ভেতরে সাড়ে তিন শতাধিক বানর থাকার পরও পল্লীবিদ্যুতের লাইন ডিজাইন করার সময় বন্যপ্রাণীর বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা মনে করছেন বিট কর্মকর্তারা।

 সরেজমিন দেখা যায়, সন্তোষপুর শাল বনের বেশ কয়েকটি বানরের খাবার নিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসা। দোকনগুলো ঘিরে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক বানর। বানর দেখতে আসা ২৫ থেকে ৩০ দর্শনার্থী দোকান থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছে।

সেখানে অন্তত ছোটবড় ৫টি বানর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ঝলসানো দেখা গেছে। একটি বানরের পোড়া হাত, আরেকটি পোড়া পা ঝুলে রয়েছে। বানরগুলোর মুখ, হাত, পা ও শরীরের পোড়া ক্ষত স্থানে পচন ধরেছে।

ক্ষতস্থানগুলোয় স্যাঁতসেঁতে ও মাছি উপদ্রব করছে। পুড়ে ঝলসে যাওয়া আহত বানরগুলো দেখলে যে কারও খারাপ লাগবে। জরুরি ভিত্তিতে আহত বানরগুলোর চিকিৎসার প্রায়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ফুলবাড়িয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অনিতা বর্ধন বলেন, বিদ্যুতের লাইনটি ডিজাইন করার সময় বন বিভাগ বললে লাইনটি কভারিং ক্যাবল দিতে পারতাম। বানরগুলো তারে জড়িয়ে আহত হচ্ছে শুনেছি, বিট কর্মকর্তা কভারিং তার দিয়ে সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন, দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান খান বলেন, বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎসংযোগের কোনো বিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে কথা বলেনি এমনকি বিদ্যুৎ লাইন টানতে গিয়ে বন বিভাগের কোনো নীতিমালা অনুসরণ করেননি।

‘বনের বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী তারে জড়িয়ে ঝলসে যাওয়ার পর লিখিতভাবে তাদের বলেছি, এরপর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৯
ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।