ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২০
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ছিলেন তৌফিক ইনাম টিপু।

পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, আমি বলেছি-আমরা এখন (বায়ুদূষণ) সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। সে অনুসারে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া দরকার। আমরা ১২ দফা নির্দেশনা চেয়েছিলাম। এগুলো দিলে বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তার মধ্যে আদালত নয়টি দিয়েছেন।

সে নির্দেশনাগুলোর ব্যাপারে মনজিল মোরসেদ ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহনে বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো ঢেকে বহন করতে হবে।  

যেসব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলে সেসব জায়গা ঢেকে রাখতে হবে। ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনও পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেসব উন্নয়ন প্রকল্প আছে সেগুলোর যথাযথ সেফটি মেজারস মেন্টেইন করে তাদের কাজগুলো পরিচালনা করতে হবে। যেসব গাড়ি কলো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং একমাসের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই ৯ দফা নির্দেশনার পাশাপাশি ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে এবং ১ মার্চের মধ্যে সব বিবাদীকে ওই ৯ দফা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আরও বলেন, ঢাকার বায়ুদুষণের কারণ এবং এটি উন্নয়নের জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা আদালতে এসে ব্যাখ্যা দেবেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি। বিশ্ব ব্যাংকের নির্মল বায়ু এবং পরিবেশের যে প্রকল্প ছিল সে প্রকেল্পে যে ৩০০ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল সেটি কীভাবে ব্যয় হয়েছে এবং পরিবেশ উন্নয়নে কী ধরনের ভূমিকা রেখেছে, এতে আমরা কী ধরনের সুফল পাচ্ছি অর্থাৎ পুরো প্রকল্পের টাকা কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেবেন।

সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়িতে যেন সমন্বয় থাকে, গর্ত থেকে যেন ধুলাবালি না উড়ে, পানি ছিটানোর জায়গা যেন বাড়ানো হয়, নতুন এলাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন।  

এর আগে ২৬ নভেম্বর ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জের অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া রাজধানীর রাস্তা ও ফুটপাতে ধুলাবালি, ময়লা ও বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই আদেশ অনুসারে পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন ও তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে এবং অবৈধ ইটভাটা বন্ধের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

 

রাজধানীতে বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আবেদন করা হয়।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে গত বছরের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

ওইদিন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, রুলে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত।

মনজিল মোরসেদ আরও জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার (রাস্তা ও নির্মাণাধীন কাজের জায়গা) কাজ চলছে সেসব এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

১৫ দিনের মধ্যে আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ পালন করে এর দুই সপ্তাহের মধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিপ্তররের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে এবং যেসব এলাকা ধুলাবালিপ্রবণ সেসব এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দু’বার পানি ছিটাতে দুই সিটির মেয়র ও নির্বাহীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ আদেশ অনুসারে বিবাদীরা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। পরে এ নিয়ে দুই সিটির নির্বাহীকেও তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২০
ইএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।