মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক।
এটি তদন্ত সংস্থার ৭৭তম প্রতিবেদন।
পাঁচজন হলেন- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা মোতাহার উদ্দিন সিকদার ওরফে মোতাহার সিকদার (৬৫), মো. ইনায়েত হোসেন মিয়া ওরফে ইনায়েত মোল্লা (৬৫), নিজামুল হক মিয়া ওরফে লুৎফর রহমান ওরফে লুথু মোল্লা (৬৮)। তদন্তের স্বার্থের বাকি দু’জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এ পাঁচজনের মধ্যে মোতাহার উদ্দিন সিকদার গত বছরের ২৬ নভেম্বর গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। যদিও এখানে ছয়জন ছিলেন। এর মধ্যে কাশিয়ানীর এবিএম রফিকুল আলম জেল হাজতে থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইনায়েত ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগ সমর্থক এবং রাজাকার সদস্য হলেও বর্তমানে তিনি কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
নিজামুল হক ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগ সমর্থক ও রাজাকার সদস্য হলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সমর্থক। মোতাহার ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগ সমর্থক ও রাজাকার সদস্য হলেও বর্তমানে তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
অপরাধ সংঘটনের স্থান: ১৯৭১ সালে কাশিয়ানী থানার ছোট বাহিরবাগ গ্রাম, রামদিয়া বাজার পোস্ট অফিস, সিতারামপুর গ্রাম এবং রামদিয়া বাজার ও বাজার সংলগ্ন প্রিন্সিপাল আয়ুবুর রহমানের বাড়ি।
অপরাধের ধরন: লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশগুম।
আসামিদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এক: ১৯৭১ সালের ২৮ জুন আনুমানিক সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পাকিস্তানিদ বাহিনীর সহযোগী রাজাকার বাহিনী সদস্য আব্দুল মান্নান মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকার মো. ইনায়েত হোসেন মিয়া নিজামুল হকসহ ১২/১৩ জন সশস্ত্র রাজাকার দল নৌকাযোগে সাবেক মহকুমা ও বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ছোট বাহিরবাগ গ্রামের আউয়াল হক মিয়ার বাড়ির পাশে ঘাটে নামে। নৌকা থেকে ঘাটে নেমেই এলোপাতাড়ি ৫/৭টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আউয়াল হক মিয়ার বাড়িতে প্রবেশ করে।
বাড়িতে থাকা স্বর্ণ অলঙ্কার লুট করে। এসময় আউয়াল মিয়ার জামাতা মুক্তিযোদ্ধা মাসুমের খোঁজ করে। তাকে না পেয়ে আউয়াল হক মিয়া ও তার ছেলে সিরাজ মিয়াকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আটক ও অপহরণ করে নৌকায় তুলে রামদিয়া বাজারের লঞ্চঘাটে দখলদার আর্মিদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আউয়াল হক মিয়াকে নির্যাতন কর তার জামাতা মাসুমকে হাজির করার শর্তে ছেড়ে দেয়। সিরাজ মিয়া গোপালগঞ্জে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে কোনো সময় হত্যা করে লাশ গুম করে।
দুই: একাত্তর সালের ৩ জুলাই কাশিয়ানী থানার ওরাকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুস ছালাম মিয়াকে পোস্ট অফিসে যাওয়ার পর আব্দুল মান্নান মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকার মো. ইনায়েত হোসেন মিয়া নিজামুল হকসহ ৯/১০ জনের একটি সশস্ত্র রাজাকার দল অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আটক ও অপহরণ করে রামদিয়া বাজারের লঞ্চঘাটে দখলদার আর্মিদের সদস্যদের কাছে হাজির করে। তাদের সহয়তায় আব্দুস ছালামকে গোপালগঞ্জে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে কোনো সময় হত্যা করে লাশ গুম করে।
তিন: ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই রাজাকার আব্দুল মান্নান মিয়া নেতৃত্বে রাজাকার ইনায়েত হোসেন মিয়া, নিজামুল হকসহ ১৮/১৯ জনের একটি সশস্ত্র রাজাকার দল গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার সিতারামপুর গ্রামে ৪/৫টি নৌকা নিয়ে প্রবেশ করে। সেখানে ৯টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই গ্রাম ও আশপাশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল কাদের মোল্লা, মকবুল হোসেন, মো. রওশন আলী মোল্লা, আনোয়ার মীর ও আজাহার শেখদের অস্ত্রের মুখে জেরপূর্বক নৌকায় তুলে রামদিয়া বাজারের লঞ্চঘাটে দখলদার আর্মি সদস্যদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নির্যাতন করে আনোয়ার মীর ও আজহার শেখকে বাধ্যক্যজনিত কারণে ছেড়ে দেয়। তবে আর্মিদের সহায়তা রাজাকাররা কাদের মোল্লাকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে এবং মকুবুল হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখে। রওশন আলী মোল্লাকে হাত পা বেধে কুমার নদীতে ফেলে দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। রাজাকার ও আর্মিরা চলে যাওয়ার পর রওশনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চিকিৎসা করালে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
চার: ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে রাজাকার আব্দুল মান্নান মিয়া নেতৃত্বে এই রাজাকাররা ও পাকিস্তানি বাহিনীর সশস্ত্র দল নিয়ে কাশিয়ানী থানার রামদিয়া বাজারে প্রবেশ করে। সেখানে স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় লোকজনদের অন্তত ৫০/৬০টি দোকান লুটপাট করে। আগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এরপর প্রিন্সিপাল আয়ুবুর রহমানের বাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
ইএস/এএ