বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আদালত কক্ষে দেখা গেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং শুরু হলে কী অবস্থা তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে এ প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিন রাখেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে বুধবার বিএসএমএমইউ থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবার। এরপর আদালত এ প্রতিবেদন পড়ে শোনান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট নিতে খালেদা জিয়া রাজি হননি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সকালে আদালত আদেশ দিতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন রোববার পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু আদালত তাতে রাজি না হলে তিনি (জয়নুল আবেদীন) এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়ার আবেদন জানান।
এরপর আদালত দুপুর ২টায় আদেশের জন্য সময় রাখেন। দুপুর দুইটার পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুটি সম্পূরক আবেদন দেন। এরপর উভয়পক্ষ শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
আদেশে আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য সম্মতি দেননি। যেহেতু তিনি তার চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত সম্মতি দেননি, তাই উন্নত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
আদালত আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র বিএসএমএমইউ হাসপাতাল। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের এখানে পাঠানো হয়। আর প্রতিবেদনের এমন কথা নেই যে এই বোর্ড খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দিতে অক্ষম বা বিএসএমএমইউতে এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।
‘তিনি একজন বন্দি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে একজন বন্দি তা পারবেন না। তার কারাবিধি ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। ’
এই আবেদনে জামিনের নতুন কোনো কারণ না দেখে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়।
তবে খালেদা জিয়া সম্মতি দিলে দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ড চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নতুন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে যুক্ত করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে।
১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এই আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন।
এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় তার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যদি সম্মতি দেন তাহলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০/আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস/এমএ