এদিন ঢাকার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী আব্দুল হান্নান চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলাটির বিচার সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে মামলার একমাত্র আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, সায়মা হত্যায় আসামির দায় আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। ধর্ষণের বিষয়ে ডিএনএ প্রতিবেদনেও প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া আসামি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই এই আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আমরা পুরোপুরি আশাবাদী।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দুই মাসের মাথায় এই মামলার রায় হতে যাচ্ছে। আমরা মামলাটি শেষ করতে সচেষ্ট ছিলাম। একটা শিশু যে নৃশংসতার শিকার হয়েছে, সেই ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি যেন বিচার ব্যবস্থায় একটি নজির হয়ে থাকে সেই চেষ্টা ছিল। সাক্ষীরাও যথাসময়ে সাক্ষ্য দিয়ে বিচার কাজে সহযোগিতা করেছেন। সবমিলিয়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে এই মামলার বিচার শেষ হওয়াকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিচার ব্যবস্থায় একটি বিরল দৃষ্টান্ত বলে মনে করি।
একই প্রত্যাশা নিহত সামিয়ার বাবা আব্দুস সালামের। তিনি বলেন, মেয়েকে হারিয়েছি সে তো আর ফিরে আসবে না! তবে ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অন্তত অপরাধীরা কিছুটা হলেও ভয় পাবে। ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু যাতে এমন নৃশংসতার শিকার না হয় সেজন্যই অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। যেহেতু মামলাটি দ্রুততার সঙ্গে বিচার শেষ হয়েছে, আশা করছি অপরাধীও সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে।
২০১৯ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবারের লোকজন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীতে বনগ্রামের খালি ফ্ল্যাটের নবম তলায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তার গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এই মামলার একমাত্র আসামি হারুনুর রশিদের বাড়ি কুমিল্লায়। ওয়ারীর বনগ্রামের যে বহুতল ভবনে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে, তার অষ্টম তলায় খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় থাকতেন হারুন এবং ঠাঁটারীবাজারে পারভেজের রঙের দোকানেই কাজ করতেন। আর হত্যার শিকার সাত বছর বয়সী মেয়েটি ষষ্ঠ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। অন্য দিনের মতো আটতলায় পারভেজের মেয়ের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার কথা বলে শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়েছিল শিশু সায়মা। ছয় বছরের সেই ছোট শিশুটি খেলতে গিয়েই হারুনের নজরে পড়ে। তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নবম তলায় ফেলে রেখে যায় ধর্ষক হারুণ।
সায়মা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদকে গত ৭ জুলাই তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় হারুন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। সেই থেকে সে কারাগারে।
গত বছরের ৫ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী জোনাল টিমের পরিদর্শক মোহাম্মদ আরজুন। ২০ নভেম্বর ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম অভিযোগপত্রটি ‘দেখিলাম’ লিখে স্বাক্ষরের পর মামলাটি বিচারের জন্য এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন।
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৮ জানুয়ারি এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দুই মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে সোমবার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
কেআই/জেডএস