সোমবার (৯ মার্চ) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়, দেশের সব বন্দরে বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।
‘এটা ছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এয়ারপোর্ট ত্যাগের আগে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম হেলথ ডেস্কে জমা দিচ্ছে। এছাড়া যাত্রীদের চারটি হটলাইন নম্বরসহ একটি স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ।
‘দেশে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার ‘ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন’ তৈরি করা হয়েছে। ভাইরাস পরীক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে আইইডিসিআর এর ল্যাবরেটরিতে বিনামূল্যে সম্পাদিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কিট পাওয়া গেছে। এ কিটটি ভাইরাস দেখা দেওয়ার পর আবিষ্কৃত হয়েছে। ’
থার্মাল স্ক্যানার সম্পর্কে বলা হয়, ঢাকা এয়ারপোর্টে তিনটি ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার রয়েছে যা ২০১৪ সালে কেনা। এরমধধ্যে দু’টি স্ক্যানার অচল। এ অবস্থায় পাঁচটি স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া চলমান। যার মধ্য থেকে একটি স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। সে হিসেবে বর্তমানে দু’টি স্ক্যানার সচল।
২১ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত শাহজালালে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৫ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমানবন্দরে সতর্কতা ও রোগের সার্ভিলেন্স জোরদার করা হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টেনিং, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীদের জন্য রেফারেন্স হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য মজুদ রাখা হয়েছে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও রোগ প্রতিরোধী পোশাক।
এ বিষয়ে দ্রুত যোগাযোগের জন্য আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মোট চারটি হটলাইন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। সব জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্দেহজনক রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট।
ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জেলা/উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক সুবিধাজনক স্থানে যেমন, স্কুল, কলেজ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে নতুন করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বলা হয়, ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ৫ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ জ্বর। এরপর শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন: কিডনি অকার্যকর হতে পারে এবং মৃত্যু হতে পারে।
রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয়, যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনো টিকা/ভ্যাকসিন এখনো নেই। চিকিৎসা দিতে হয় লক্ষণভিত্তিক। অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।
এ রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয় সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড), অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না, ইতোমধ্যেই আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, হাঁচি/ কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন, অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চীন ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
প্রতিবেদনে সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়, অসুস্থ রোগীদের ঘরে থাকতে বলুন, মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে কাছের হাসপাতালে যেতে বলুন, রোগীকে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন, আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
আদালতে প্রতিবেদন দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসান। এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে গত ৫ মার্চ করোনার বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। পরে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সে পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে ওই প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২০
ইএস/এএ