এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ অবশ্য ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতিগত আইন ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধিরই অনুসরণ করছেন। ব্রিটিশ শাসনামলে তাদের দ্বারা প্রণীত এই আইনের ৪০১ ধারা অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তির সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ আনিসুল হক।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারায় যা বলা হয়েছে...
(১) কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইলে সরকার যে কোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যাহা মানিয়া নেয় সেই শর্তে তাহার দণ্ড স্থগিত রাখিতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করিতে পারিবেন।
(২) যখন কোনো দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করিবার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত উক্ত দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন দিয়েছিলেন সেই আদালতের প্রিজাইডিং জজকে সরকার উক্ত আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করিতে অস্বীকার করা উচিত কিনা সে সম্পর্কে তাহার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করিতে এবং বিবৃতির সহিত বিচারের নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির সহিত নকল প্রেরণ করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
(৩) যে সকল শর্তে কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হইয়াছে তাহার কোনটি পালন করা হয় নাই বলে মনে করিলে সরকার স্থগিত বা মওকুফের আদেশ বাতিল করিবেন এবং অতপর যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হইয়াছিল সে মুক্ত থাকিলে যে কোনো পুলিশ অফিসার তাহাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করিতে পারিবেন এবং তাহার দণ্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করিবার জন্য তাহাকে জেলে প্রেরণ করা যাইবে।
(৪) যেই শর্তে এই ধারার অধীন দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় যাহা, যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় সেই ব্যক্তি পূরণ করিবে অথবা শর্ত এমন হইবে যে যাহা পূরণে সে স্বাধীন থাকিবে।
(৪ক) এই বিধি অন্য কোন আইনের কোন ধারা অনুসারে কোন ফৌজদারী আদালত কোন আদেশ দান করিলে তাহা যদি কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা তাহার সম্পত্তির উপর দায় আরোপ করে, তাহা হইলে উপরোক্ত উপধারাসমূহের বিধান এই আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।
(৫) প্রেসিডেন্টের অনুকম্পা প্রদর্শন, দণ্ড স্থগিত রাখা বা কার্যকরীকরণের বিলম্ব ঘটানো বা মওকুফ করিবার অধিকারে এই ধারার কোনো কিছুই হস্তক্ষেপ করিবে বলিয়া মনে করা যাইবে না।
(৫ক) প্রেসিডেন্ট কোনো শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা মঞ্জুর করিলে উক্ত শর্ত যে প্রকৃতিরই হউক না কেন উহা এই আইন অনুসারে কোন উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা আরোপিত শর্ত বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদানুসারে বলবৎযোগ্য হইবে।
(৬) সরকার সাধারণ বিধিমালা বা আদেশ দ্বারা দণ্ড স্থগিত রাখা এবং দরখাস্ত দাখিল ও বিবেচনার শর্তাবলী সম্পর্কে নির্দেশ দিতে পারিবেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) আইনমন্ত্রী জানান, বয়স বিবেচনায় ও মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এই সময়ে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে তাকে। এমনকি বিদেশও যেতে পারবেন না।
সেক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১/১ ধারার বিধান অনুসারে খালেদা জিয়ার পরিবারের করা আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
মুক্তির পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই তিনি মুক্তি পাবেন। আমি ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি।
তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এ সংক্রান্ত ফাইল পাননি বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। ওই মামলায় আপিলের পর হাইকোর্টে সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনও আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
এছাড়া ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে গত বছরের ৩১ জুলাই তা খারিজ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
কেআই/আরবি/