তবে ছুটিতে আটক বা গ্রেফতার কার্যক্রম থেমে নেই। এ অবস্থায় কারাগার থেকে কোনো বন্দি মুক্তি না পেলেও প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা।
জানা যায়, ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দায়রা জজ আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে জামিন নিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন বন্দি মুক্তি পান। ছুটির আগে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জনও মুক্তি পেয়েছেন।
তার বিপরীতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কারাগারে যান ১০০ থেকে ১৫০ জন। কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন বন্দির সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজারের মতো। যেখানে কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন।
ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ কারাবন্দি নিয়ে করোনায় এমনিতেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত কারা কর্তৃপক্ষ। তার উপর সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় হচ্ছে না কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানিও।
শুধু নতুনভাবে গ্রেফতার বা আটক আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজিরের বাধ্যবাধকতা রক্ষায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে প্রতিদিন দুজন বিচারক বসেন। তারা বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার বা আটকদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেন।
কিন্তু কারাবন্দি আসামিদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য কোনো আদালত ছুটিতে বসছে না। তাই কারাগারে প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। ছুটির মেয়াদ বাড়লে কারাগারে এই চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের এই চাপ সামলানো ও করোনা আতঙ্কে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি এখন ভাবাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে।
এ অবস্থায় কারাবন্দিদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি অব্যাহত রাখলে কিছু বন্দি মুক্তি পেতেন। যাতে কিছুটা সুবিধা হতো বলে মনে করছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাই কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করছেন কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে গত চারদিনে কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি হয়নি। সাপ্তাহিক ছুটিসহ আরও ছয়দিন চলবে এই বন্ধ। সংখ্যায় কম হলেও বিভিন্নভাবে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন বন্দি আসছেন, বিপরীতে কেউ মুক্তি পাচ্ছেন না। তাই কারাগারে প্রতিদিনই বন্দি সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক বিবেচনায় কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি বিশেষ ব্যবস্থায় হলেও চালু রাখা উচিত। না হয় এই চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
তবে আইনজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমত আছে। জুনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, যেহেতু জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক লকডডাউন ঘোষণা করা হয়নি, তাই কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি হতে পারে। এতে নতুন আইনজীবীদের আয়েরও কিছুটা ধারাবাহিকতা থাকে। কারণ আদালত বন্ধ থাকলে এর একটা আর্থিক চাপ অপেক্ষাকৃত নতুন আইনজীবীদের উপর পড়ে।
ঢাকার আদালতে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন অ্যাডভোকেট এম কাওসার আহমেদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আদালত পুরোপুরি বন্ধ থাকায় আমাদের উপর আর্থিক চাপ বাড়ছে। আমরা যারা তুলনামূলক নতুন আইনজীবী আছি তাদের এ অবস্থায় দিনাতিপাত করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তার উপর বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি তো আছেই। তাই অন্তত জামিন শুনানি চালু রাখা উচিত।
একই ধরনের অভিমত গাজীপুর আদালতে প্র্যাকটিস করা অ্যাডভোকেট নাবিল আশিকের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি সপ্তাহে আমার অনেকগুলো জামিন শুনানি ছিল। কিন্তু ছুটির কারণে সেসব আর সম্ভব হচ্ছে না। এখন ছুটি বাড়লে সীমিত পরিসরে হলেও কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানির ব্যবস্থা থাকা উচিত। না হয় রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। অনেকের বন্দিত্বের দিনের পরিমাণও বাড়বে। যা বন্দি ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তিতে ফেলবে।
তবে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকিরের মত ভিন্ন। তিনি বলেন, সরকার যথাসময়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। জামিন শুনানি বন্ধ থাকায় কিছুটা চাপ বাড়লেও ছুটি শেষে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ অবস্থায় ছুটির সিদ্ধান্তই যথাযথ হয়েছে। কারণ করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে এখন জনসমাগম এড়িয়ে চলা সবার জন্যই জরুরি।
জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় আমরা বার থেকে জামিন ও নিষেধাজ্ঞার শুনানি চালু রাখতে বলেছিলাম। তবে সরকার ছুটি ঘোষণা করায় তা আর সম্ভব হয়নি। এখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্ভোগ হলেও এতে কিছু করার থাকছে না।
তবে ছুটি যদি বাড়ে তখন জামিন শুনানির বিষয়ে কি করা যায় তা আলোচনার মাধ্যমে অভিমত দেবেন বলে জানান ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
কেআই/এমএ