ঢাকার আদালতে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন অ্যাডভোকেট তৌফিক শাহরিয়ার খান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আদালত বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটছে।
তিনি আরও বলেন, বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবীদের জন্য আলাদা ব্যাংক থাকলে এ ধরনের ক্রান্তিকালে ঋণ সুবিধা পাওয়া সম্ভব হতো। করোনার চিকিৎসায় ঢাকা বারের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল সার্ভিস আছে, তবে তা খুবই অপর্যাপ্ত। তাই ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বার কাউন্সিলের নতুন ভবনে জরুরি মেডিক্যাল সেবার ব্যবস্থা রাখা উচিত।
আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তোরাব বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে আদালতে কোনো কাজ নেই। এ সময়টা গ্রামের বাড়ি আছি। রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ; এখন দিনাতিপাত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদের আগে জামিন শুনানিতে আদালত বিশেষ বিবেচনা করে থাকেন। তাই চলমান অবস্থায় ঈদের আগে আদালত না খুললে আর্থিক চাপ সামাল দেওয়াটা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, চলমান বন্ধে মামলার ডায়েরি এলোমেলো হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে আদালত খুললেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে। তাই যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আদালত বন্ধ রাখাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে আমাদের এর বিকল্প ভাবতে হবে। এই দুর্যোগ ই-জুডিশিয়ারির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছে। ব্যারিস্টারি পড়ার সময় লন্ডনে আমরা নিয়মিত কোর্ট ভিজিটে যেতাম। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলোতে দেখেছি কারাগার থেকে আসামিদের হাজির না করেই বেশিরভাগ মামলার কাজ পরিচালনা করা হয়। আমাদেরও সে পথে হাঁটতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচার পরিচালনার সুযোগ থাকলে আদালত এভাবে বন্ধ রাখতে হতো না।
তবে তুলনামূলক সিনিয়র আইনজীবীরা অবশ্য করোনার ভয়াবহতার তুলনায় লকডাউনের ক্ষতিকে বড় করে দেখছেন না। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের সহকারি পাবলিক প্রসকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বাংলানিউজকে বলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যথার্থ ছিল। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে সাময়িক অসুবিধা হলেও এটা করোনার সম্ভাব্য ক্ষতির তুলনায় কিছুই না।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আইনজীবীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকা বারের সদস্যদের জন্য আমরা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত প্রায় ২৫ হাজার আইনজীবীর মধ্যে ঋণের জন্য সাত হাজার ৫১১ জন আবেদন করেছেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। অনেকের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে টাকা নেই, অনেকে দুইবার আবেদন করেছেন, আবার অনেক শিক্ষানবিশও আবেদন করছে। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি। তাছাড়া আমরা ঢাকা বার থেকে করোনা উপলক্ষে জরুরি মেডিক্যাল সার্ভিসের ব্যবস্থাও রেখেছি।
গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দেশের সব আদালতের কার্যক্রমও বন্ধ আছে। চলতি সপ্তাহে সীমিত পরিসরে আদালতের কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিলেও পরে সাধারণ আইনজীবীদের চাপের মুখে সে উদ্যোগ স্থগিত হয়ে যায়। এখন ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর ব্যাপােরে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
কেআই/এএটি