দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে এবং শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া সাধারণ ছুটিকালীন ও হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১০ মে এ ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল কোর্টে ৩২১টি আবেদন করা হয়েছে।
কয়েকটি আবেদন নিষ্পত্তিও হয়েছে। তবে সোমবার প্রথমবারের মতো ভার্চ্যুয়াল কোর্টে হালদা নদীর ডলফিন নিয়ে রিট শুনানি হয়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চ্যুয়াল কোর্টে ১২টি রিট আবেদন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কোর্টে ২৭০টি জামিন আবেদন, বিচারপতি জে বি এম হাসানের কোর্টে ৩৫টি জামিন আবেদন ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে একটি আবেদন জমা পড়ে।
এছাড়া আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের চেম্বার আদালতে তিনটি আবেদন জমা পড়ে।
সুপ্রিম কোর্টের সূত্র মতে, এসব আবেদনের মধ্যে কিছু নিষ্পত্তি হয়েছে। কিছু আবেদন নিয়ে নিয়মিত আদালতে যেতে বলা হয়েছে। কিছু আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করা হয়েছে। আবার কয়েকটি মুলতুবিও করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশের নিম্ন আদালতে ভার্চ্যুয়াল শুনানি নিয়ে মোট ২ হাজার ৯৭৮ আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এজন্য সুপ্রিম কোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।
এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
দু’দিন পর ৯ মে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতো হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।
অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তির ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
পরদিন ১০ মে উচ্চ আদালতের সব বিচারপতিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ফুলকোর্ট সভা করেন প্রধান বিচারপতি। সেখানে এ কোর্ট চালুর জন্য প্র্যাকটিস নির্দেশনা অনুমোদিত হয়।
এরপর উচ্চ আদালতসহ অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২০
ইএস/আরবি/