তার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন এবং ওই ঘটনায় পুলিশের করা তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর (২৮ জুন) বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এক রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুন স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন এবং ওই ঘটনায় পুলিশের করা তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
পরে সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে এখন তার কিডনির ফাংশন নরমাল এবং হিইজ ফিজিক্যালি ওয়েল বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইমরান হোসেনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এরপর আদালত সেই ছাত্রের ডোপ টেস্টের প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট।
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব জানান, ভিকটিম ইমরানের ডোপ টেস্ট করে তার রিপোর্ট এবং তার চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাগজপত্র আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে যশোরের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৮ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে এ রিট পিটিশন দাখিল করেন।
আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি), যশোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং যশোরের সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
১৫ জুন ভুক্তভোগী কলেজছাত্র ইমরানের অভিযোগ, গত ৩ জুন সন্ধ্যায় তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে এক সঙ্গীসহ বাড়ি ফিরছিলেন। পথে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে মারধর করে। পরে ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার জ্ঞান ফিরলে একটি ফার্মেসিতে নিজেকে দেখতে পান। এ সময় পুলিশ পকেটে গাঁজা দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন করে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ছয় হাজার টাকায় ছেড়ে দেয়। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে ইমরানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বেসরকারি কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, তার দুটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৮ জুন বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানি শেখের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
গত ১৫ জুন তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
ওইদিন যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে কলেজছাত্র ইমরানকে নির্যাতনের সত্যতা মেলেনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে ইমরানকে নির্যাতন করলে কিডনি হ্যামারেজ কিংবা ডেমারেজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। আগে থেকেই তার কিডনির সমস্যা ছিল। এছাড়া তার শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এদিকে ১৫ জুন প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের সেই ৪ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। তারা হলেন- সাজিয়ালি ক্যাম্প ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আনিচুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুমারেশ কুমার সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও কনস্টেবল ফারুক হোসেন।
যশোরের এসপি আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের অভিযোগ তদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে কর্মস্থল ত্যাগ ও সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা করায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২০
ইএস/এইচএডি