ঢাকা: বুড়িগঙ্গায় ‘মর্নিং বার্ড’ লঞ্চডুবিতে হতাহতের ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার দায় চাপিয়েছিলেন সুকানি নাসির মৃধার ওপর। দিয়েছিলেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
তবে সুকানি নাসির উল্টো দায় চাপালেন মাস্টার আবুল বাশারের ওপর। সঙ্গে জড়ালেন লঞ্চটির মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদকে। জানালেন, মালিকের ডাকেই সদরঘাট থেকে লঞ্চটি নিয়ে দুর্ঘটনাস্থল লালকুঠিতে যান তিনি।
রোববার (১৯ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমিদা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সুকানি নাসিরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে সুকানি নাসির বলেন, দুর্ঘটনার দিন সকালে ময়ূর-২ লঞ্চ নিয়ে আমরা সদরঘাটেই ছিলাম। তখন সুপারভাইজার আব্দুস সালাম ফোন দিয়ে বলেন মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ লঞ্চটি লালকুঠি ঘাটে নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলে সুপারভাইজার জানায়, মালিকের কিছু ব্যক্তিগত জিনিস লঞ্চে আছে যা লালকুঠি ঘাটে নামাতে হবে। তখন আমরা লঞ্চটি নিয়ে লালকুঠি ঘাটের কাছাকাছি যাই। এ সময় মর্নিং বার্ড লঞ্চটি আমাদের লঞ্চের কাছে চলে আসে। তবে লঞ্চের হেড মাস্টার আবুল বাশার মর্নিং বার্ড লঞ্চের পাশে থাকলেও সঠিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে মর্নিং বার্ড জাহাজটিতে ময়ূর-২ লঞ্চের সজোরে ধাক্কা লাগে এবং লঞ্চটি ডুবে যায়।
গত ১৬ জুলাই নাসির মৃধাকে (৪০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সেই রিমান্ড চলাকালে তিনি স্বেচ্ছায় ঘটনার স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হন। তাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ থানার উপ-পরিদর্শক শহিদুল আলম তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
স্বীকারোক্তির বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ-পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুল আলম কিছু বলতে রাজি হননি। তবে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, মাস্টার আবুল বাশার এর আগে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এখন সুকানি নাসিরও একইভাবে জবানবন্দি দিলেন। তারা জবানবন্দিতে অনেক কিছুই বলেছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।
গত ১৫ জুলাই ভোরে বাগেরহাট থেকে র্যাব-৮ এর সদস্যরা নাসিরকে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নাসির বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভবানীপুর এলাকার শাহজাহান মৃধার ছেলে।
এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভূক্ত ৫ জনসহ ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এজাহারভূক্ত দুই আসামি মাস্টার জাকির হোসেন ও হৃদয় পলাতক রয়েছেন। গত ১৫ জুলাই মামলার প্রধান আসামি ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। ৯ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোয়াদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ১২ জুলাই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার ময়ুর-২ লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুস সালামকে তিনদিনের জন্য রিমান্ড শেষে গত ৯ জুলাই কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া রোববার ময়ূর-২ লঞ্চের দুই ইঞ্জিন চালক শিপন হাওলাদার ও শাকিল হোসেনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ গত ২৯ জুন সকালে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সদরঘাটের দিকে আসছিল। শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় গত ৩০ জুন ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ সাতজনকে আসামি করে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় নৌ-পুলিশের এসআই শামছুল আলম দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার, মাস্টার জাকির হোসেন, স্টাফ শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, হৃদয় ও সুকানি নাসির মৃধার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রাণহানির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৩৩৭ ও ৩৪ ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই লঞ্চ দুর্ঘটনার পর সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, পেছনে চলতে থাকা ময়ূর-২ এর ধাক্কায় ছোট আকারের মর্নিং বার্ড মুহূর্তের মধ্যে বুড়িগঙ্গায় ডুবে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২০
কেআই/এমআরএ