ঢাকা: শেষ কর্মদিবসে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি তাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ বলেন, বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চ (আদালত) একে অপরের পরিপূরক। বার ছাড়া যেমন বেঞ্চের অস্তিত্ব থাকে না। তেমন বেঞ্চ ছাড়া বারের অস্তিত্ব থাকে না। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, বিচারপ্রার্থী জনগণকে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার প্রদানের জন্য বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুন্দর ও সৌহার্দ সম্পর্ক থাকা অত্যন্ত আবশ্যক।
‘চাকরির চিরন্তন নিয়ম অনুযায়ী আজ চাকরি থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি। আমি চাকরি থেকে বিদায় নিচ্ছি এতে আমার কোনো কষ্ট নেই, মানসিক কোনো দুঃখ নেই বরং আমি ভারমুক্ত। তবে আমার কষ্ট হচ্ছে যাদের সঙ্গে আমি এতদিন ছিলাম, তাদের ফেলে যেতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার চাকরি জীবনে সম্পূর্ণ সৎ থেকে ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে আমি আমার দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু করতে পেরেছি আপনারা তার বিচার করবেন। ’
বিদায়ী এ বিচারপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের সঙ্গে যারা জুনিয়র আইনজীবী আছেন, তারা যেন বর্তমান কঠিন সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের পরিবাবর পরিজন নিয়ে সুষ্ঠুভাবে এবং সম্মান জনকভাবে বাঁচতে পারে সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন। কেননা আমিও একদিন জুনিয়র আইনজীবী ছিলাম। সেহেতু জুনিয়রদের দুঃখ আমি বুঝি।
নিজের সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি আমার এতিম খানার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছেন। ওনাকে অনেক ধন্যবাদ। ১১টি এতিম খানার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা আছে। আমার হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে আছে। আমার শেষ ইচ্ছা, আমার শেষ জীবনে এতিম বাচ্চাদের মধ্যে থেকেই তাদের ভালোবাসায় আমি বিদায় নিতে চাই।
এসময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ড. মো. বশির উল্লাহ, প্রতিকার চাকমা, এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, অমিত দাসগুপ্তসহ আইনজীবীরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
এ বিচারপতি নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা, জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মোমিন, লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী স্মৃতি নাথ সীমাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং নরসিংদীর সিক্স মার্ডারের মতো আলোচিত মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় দিয়েছিলেন।
বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ১৯৫৩ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজিতে এম এ এবং এল এল বি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ জেলা বারে আইনজীবী হিসেবে তালিকভুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সলের ২০ এপ্রিল মুন্সিফ হিসেবে (সহকারী জজ) বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর তাকে দুই বছরের জন্য হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
সংবিধান অনুসারে ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হলে অবসরে যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সেই অনুসারে ৭ আগস্ট তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। এরমধ্যে শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে। এটি শেষ হবে ৮ আগস্ট (শনিবার)। এ কারণে বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস হিসেবে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
ইএস/আরবি/