ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নিয়মিত আদালত খুললেও কাটেনি ছুটির আমেজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২০
নিয়মিত আদালত খুললেও কাটেনি ছুটির আমেজ ...

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আদেশে শুরু হয়েছে অধস্তন আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম। তবে বুধবার (৫ আগস্ট) প্রথম দিনে আদালত পাড়ায় জনসমাগম কিছুটা কম ছিল।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঈদের ছুটির কারণে অনেকেই এখনো কাজে যোগদান করেননি। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হয়তো আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।  

কোভিড-১৯ এর কারণে নিয়মিত আদালতের কর্যক্রম গত ২৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। দেড় মাস পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর গত ১১ মে থেকে শুধু হাজতি আসামির জামিন শুনানির জন্য ভার্চ্যুয়ালি আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর ধীরে ধীরে এনআই অ্যাক্টের মামলা দায়েরও শুরু হয় অনলাইনে।  

তবে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম চালুর দাবিতে আইনজীবীদের একাংশ আন্দোলন শুরু করে। সেসব দাবির মুখে জুলাই মাসের শুরুর দিকে আদালতের পরিসর বাড়ানো হয়। দেওয়ানী মামলার কার্যক্রমও শুরুর আদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তাছাড়া 
আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন শুনানি ও আদালতে নালিশী (সিআর) মামলা দায়ের শুরু হয়।  

তবুও নিয়মিত আদালত চালুর দাবিতে চলতে থাকে এই আন্দোলন। সবমিলিয়ে গত ৩০ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনে ৫ আগস্ট থেক নিয়মিত আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী দীর্ঘ চার মাস পর বুধবার শুরু হয় নিয়মিত আদালত।  

তবে নিয়মিত আদালত চালু হলেও এদিন আদালতপাড়ায় জনসমাগম খুব বেশি ছিল না। আইনজীবীদের উপস্থিতি কিছুটা থাকলেও বিচার প্রার্থী ছিল তুলনামূলক কম। নিয়মিত আদালত শুরু হলেও পুরনো মামলার তারিখ নির্ধারণেও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান বেঞ্চ সহকারীরা। সবমিলিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকেই হয়তো পুরোপুরি সচল হয়ে উঠবে আদালত অঙ্গন।  

নিয়মিত আদালত চালুতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে। ঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যার মধ্যে রয়েছে এজলাস কক্ষে একসঙ্গে ছয়জনের বেশি মানুষ প্রবেশ না করা, সার্বক্ষণিক মুখাবারণ পরিধান, কারাগার থেকে হাজিরার জন্য আসামিদের আদালতে না আনা, এজলাসে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা, আদালতের বাইরে বেসিন স্থাপনের মাধ্যমে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। তবে এসব নির্দেশনা প্রতিপালন নিয়ে অনেকেই সংশয়ে আছেন।  

অবশ্য তুলনামূলক জুনিয়র আইনজীবীরা নিয়মিত আদালত চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।  

আইনজীবী এম কাওসার আহমেদ বলেন, আদালতের কার্যক্রম প্রথম বন্ধ ও পরে সীমিত হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আইনজীবীরাও অনেকে কষ্টের মধ্যে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর নিয়মিত আদালত চালুর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।  

আইনজীবীদের অনেকে অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সংশয়ে আছেন। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের জারি করা নির্দেশনা আদালত অঙ্গনে কতটা মানা হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।  

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র নেতারা এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে সমিতির দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচ এম মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা যেমন ভাবতে হচ্ছে, তেমনি আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের অসুবিধার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের সঙ্গে জীবিকা ও ন্যায়বিচারের কথাও ভাবতে হবে। আশা করছি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আদালতে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করবেন।  

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক সিকদার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, আইনজীবীরাও কষ্টে আছেন। আদালতে বার ও বিচার প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বারের গেট ও কোর্ট রুমে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখা হয়েছে। সবাই সতর্কতা অবলম্বন করলে আশাকরি খুব সমস্যা হওয়ার কথা না।  

গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। অধ্যাদেশটি গত ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে পাশের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়।  

যাতে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

এতে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২০
কেআই/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।