যশোর: অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি ও ১০ লাখ টাকা দাবিতে জিম্মি করে আটদিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর র্যাব অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও জিম্মিকারীকে আটক করে। এ ঘটনায় জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলাও হয়।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের একটি অভিযানের প্রেসবিজ্ঞপ্তি গত ১ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে র্যাব-৬, সিপিসি-৩, যশোর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল যশোর জেলার শার্শা থানাধীন কুচামোড়া এলাকার মেসার্স খালিদ বেভারেজ প্রা. লি. ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালায়।
অভিযানে জিম্মি করে রাখ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার পালপানি মণ্ডলপাড়া এলাকার মৃত গোলাম মোস্তফা মণ্ডলের ছেলে বদিউজ্জামান মণ্ডলকে (৩৩) উদ্ধার ও জিম্মিকারী আসামি যশোরের শার্শা উপজেলার বড়বাড়িয়া পানবাড়ি এলাকার কোরবান আলীর ছেলে খালিদ হাসান শান্টুকে আটক করা হয়। এ সময় আসামির শর্টগান, গুলি, নির্যাতন চালানো স্টিলের পাইপ, প্লায়ার্স, সাদাস্ট্যাম্প, ব্ল্যাঙ্ক চেক ইত্যাদি উদ্ধার করে র্যাব।
এ ঘটনায় পরদিন ১ আগস্ট শার্শা থানায় ধারা- ৩৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৪/৩৮৫/৩৮৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ বাংলাদেশ পেনাল কোড আইনে মামলা করেন ভিকটিম বদিউজ্জামান মণ্ডলের স্ত্রী সানজিদা আক্তার বিথী।
বাদী সানজিদা আক্তার বিথী জানান, তার স্বামী বদিউজ্জামান মণ্ডল মেসার্স খালিদ বেভারেজ প্রা. লি. ফ্যাক্টরিতে ম্যানেজার পদে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানের মালিক খালিদ হাসান শান্টু গত ২৪ জুলাই থেকে তার স্বামীকে ফ্যাক্টরিতে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন শুরু করে। তাকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর অসুস্থ করার পর প্লায়ার্স দিয়ে নখ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। মাথায় শর্টগান ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে সাদা স্ট্যাম্প ও ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করিয়ে নেয়। টাকার জন্য নির্যাতন করে তাদের কাছে ফোন করে চাপ দেওয়া হয়। টানা আটদিন এমন অত্যাচার নির্যাতনের পর সানজিদা আক্তার বিথী র্যাবের কাছে অভিযোগ করলে ৩১ জুলাই র্যাব অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও আসামিকে আটক করে।
শার্শা থানায় ১ আগস্ট দায়েরকৃত এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন। তিনি আসামি আদালতে সোপর্দ করে উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। ’
৩ আগস্ট শার্শার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি খালিদ হাসান ওরফে শান্টু’র জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
অভিযোগ উঠেছে, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামির জামিনের জন্য চাপ প্রয়োগ এবং আদালত বর্জনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
একদিন পর ৪ আগস্ট আসামির আইনজীবী মোজাফফর উদ্দিন মোহন যশোর ভাচ্যুয়াল আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেন। শুনানি শেষে যশোর ভার্চ্যুয়াল আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক আসামি খালিদ হাসান শান্টুর জামিন দেন।
জামিন আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ভার্চ্যুয়াল শুনানিকালে আসামির জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন নাই। ’ অভিযোগ রয়েছে, দু’পক্ষের আইনজীবীই পিপির চেম্বারে বসে ভার্চ্যুয়াল শুনাতিতে যুক্ত হয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের পাবলিক প্রসিকিউটর, সরকারের না। যেটি যথার্থ সেটিই বলবো। অনেক সময় আমার কথা আসামির পক্ষে যেতেও পারে। কারণ আমি রাষ্ট্রের, আমি সবার। তবে আমি যথার্থ কথা বলেছি কিনা এটাই বিবেচ্য। ’
অ্যাড. ইদ্রিস আলী স্বীকার করেন এই মামলার চাঁদাবাজির ধারাটি ননবেইলএবল (অজামিনযোগ্য)। তবে তিনি দাবি করেন, ভিকটিম আসামির ফ্যাক্টরির ম্যানেজার। চাঁদাবাজির বিষয়টি আসে না। এটি বাদ দিলে অন্য ধারাগুলো জামিনযোগ্য। আদালত সবপক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন দিয়েছেন। আর তার চেম্বারে বসে আসামি পক্ষের আইনজীবীর শুনানিতে অংশ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোজাফফর উদ্দিন মোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ‘জামিনের ব্যাপারে আদালতে খোঁজ নেন’ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেননি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, র্যাব ওই আসামিকে আটক ও ভিকটিম উদ্ধারের ঘটনাটি তিনি জানেন। এই মামলার ৩০৭, ৩৮৫ ও ৩৮৭ জামিনঅযোগ্য ধারা। রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে মামলায় বাদী ও ভিকটিমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেওয়া। এরপর আদালত বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যদি আসামির জামিনের বিরোধিতাই না করে, তা খুবই দুুঃখজনক।
অভিযোগ উঠেছে, খালিদ হাসান শান্টু’র জামিনের নাম করে ৫ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এ নিয়ে আদালতপাড়ায় নানান গুঞ্জন চলছে। তবে এসব অভিযোগ ‘অমূলক’ বলে দাবি করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইদ্রিস আলী।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
ইউজি/এএটি