ঢাকা: করোনা পরীক্ষা না করে মনগড়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী, তার স্বামী ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনসারী এই আদেশ দেন।
অন্য ছয় আসামি হলেন—আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।
বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে পিছিয়ে ২০ আগস্ট ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে গত ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অভিযোগপত্রটি দেখার পর মট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত তা সিএমএম বরাবর বদলির আদেশ দেন। এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে আসে।
অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফুলকে জালিয়াতি ও প্রতারণার মূল হোতা ও বাকি ছয়জনকে অপরাধে সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই মামলায় আসামিদের কয়েকদফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে সাবরিনাকে এবং তার একদিন আগে আরিফুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১২ জুলাই সাবরিনাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সেই রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় দফায় গত ১৭ জুলাই আরও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক। জেকেজির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে সাবরিনা আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়।
গত ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরদিনে ১৩ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। সাবরিনার রিমান্ড চলাকালেই গত ১৫ জুলাই কারাগারে থাকা তার স্বামী আরিফুলকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৭ জুলাই সাবরিনাকে ফের দুদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ডে নিয়ে দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
গত ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।
এছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও পাওয়া যায়। কলেজের কক্ষে নারী-পুরুষের আপত্তিকর অবস্থানসহ নানা অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফুলের লোকজন।
অভিযোগ পাওয়া যায়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন আরিফ। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
জানা যায়, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২০
কেআই/এমজেএফ