সিলেট: ২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট। দিনটি ছিল বুধবার।
একই সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সিঁড়ির নিচে বিস্ফোরিত হয় আরেকটি বোমা। কেবল আদালত পাড়ায়ই নয়। সিলেটের ১০টি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হন অন্তত ১৫ জন। শুধু সিলেটেই নয়। সেদিনের সেই বোমা হামলা ঘটে দেশের ৬৩ জেলায়।
বিস্মৃতির অতলে থাকা ২০০৫ সালের ভয়াল সেই তারিখটি আজ (১৭ আগস্ট)। একইভাবে গত ১৯ বছরে সিলেটে সাতবার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৪শ’র অধিক লোকজন। তাদের অনেকে এখনো পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
২০০৪ সালে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে ওরসে ও তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী মাজার জিয়ারতে এলে তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়ে জঙ্গিরা।
ওই বছর সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।
একই বছরে সিলেটের গুলশান হোটেলে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে বেরোনোর পথে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামীলীগ নেতা ইব্রাহিম নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। ২০০৫ সালে হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান সাবেক অর্থমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে সিলেটের আতিয়া মহলের পাশে জঙ্গিদের পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও দুই পুলিশ অফিসারসহ ৭ জন মারা যান।
এছাড়া ২০০৬ সালে সিলেটের শাপলাবাগে সূর্যদিঘল বাড়ি থেকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়েখ রহমানকে সপরিবারে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১১ আগস্ট সিলেট থেকে আঞ্চলিক কমান্ডারসহ নব্য জেএমবির ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিপিসি)। তাদের পরিকল্পনায় ছিল শাহজালাল (র.) মাজারে বোমা হামলা করা। গত ২৩ আগস্ট তারা এই হামলার পরিকল্পনা করে। তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় তারা।
গত ১৫ বছর আগের এসব ঘটনায় সিলেট বিভাগে ২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরমধ্যে মামলা হয় সিলেটে ১৩টি, হবিগঞ্জে ৫টি ও মৌলভীবাজারে ৫টি, সুনামগঞ্জে ৬টি। যেগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জের একটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। ওই মামলায় দুই জঙ্গি ১০ বছর করে দণ্ডিত হন।
সিলেটের কোর্ট পরিদর্শক মাহবুবুল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ১৭ আগস্টের ঘটনায় সিলেটে দায়ের করা ১০ মামলার ৯টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৩টিতে সাজা হয়েছে ৪ জনের। এছাড়া ব্রিটিশ হাই কমিশনারের ওপর গ্রেনেড মামলারও বিচার শেষ হয়েছে। বিচাররাধীন রয়েছে সিলেটের গুলশান হোটেলে গ্রেনেড হামলা, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জেবুন্নেছা হকের বাসায়, ডা. আরিফ মোমতাজ আহমদ রিফার বাসায়, সূর্যদিঘল বাড়ি, আতিয়া মহলের ঘটনায় দায়ের করা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জে বৈদ্যের বাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলা সিলেটের দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব মামলাগুলো সাক্ষীদের হাজির করতে না পারার কারণেই মামলাগুলো ঝুলে আছে। এসব মামলার অনেকটি বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না পুলিশ।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সাবেক পিপি আডভোকেট কিশোর কুমার কর বাংলানিউজকে বলেন, শুধু সাক্ষীর জন্যই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলা ঝুলে আছে। সম্প্রতি তিনি ওই আদালত থেকে বদলি হয়ে আসার আগ পর্যন্ত মামলায় ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সাক্ষী যত দ্রুত নেওয়া যাবে, মামলাটি তত দ্রুত সম্পন্ন হবে বলেন তিনি।
সিলেট জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি শামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সব ক’টি মামলা বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারের আইনজীবী হিসেবে আমরা সব ক’টি মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সাক্ষীর জন্য মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব মামলা দ্রুত সম্পন্নের জন্য আলাদা একটি কোর্টে নেওয়া যেতে পারে। নতুবা স্বরাষ্ট্রন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করে মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়া যেতে পারে। কেননা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এখন মামলা নেই বললেও চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২০
এনইউ/এএটি