ঢাকা: ৬ আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের সুপ্রিম কোর্টের সব অবকাশকালীন ছুটি বাতিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্তে মামলা জট কমবে এবং আদালতের দ্বারস্থ হতে বিচারপ্রার্থীদের আশা পূরণ হবে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বর্ষপঞ্জির ৬ আগস্ট পরবর্তী অবকাশকালীন সব ছুটিসমূহ বাতিল করা হলো। ’
২০২০ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ আগস্টের পর ৩১ আগস্ট থেকে ৫ অক্টোবর, ২৫ ও ২৭ অক্টোবর এবং ২০ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবকাশকালীন ছুটি ছিল।
করোনা মহামারির এ সময়ে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর সঙ্গে মিল রেখে আদালতেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদও বাড়ানো হয়।
এর মধ্যে সরকার অধ্যাদেশ জারির পর ১১ মে থেকে আদালতে ভার্চ্যুয়াল বিচার কাজ শুরু হয়। ওই অধ্যাদেশটিকে পরে আইনে পরিণত করা হয়। সবশেষ গত ১৬ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সরকার ৩০ মের পর সাধারণ ছুটি আর না বাড়ালেও আদালত অঙ্গনে নিয়মিত কার্যক্রমের পরিবর্তে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কাজ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
কিন্তু গত ৩০ জুলাই অধস্তন আদালতে ৫ আগস্ট থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ চালুর সিদ্ধান্ত দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সে অনুসারে অধস্তন আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। অপরদিকে ১২ আগস্ট থেকে ভার্চ্যুয়ালের পাশাপাশি শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে বিচার কাজ শুরু হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনার ভয়াবহতার কারণে এরই মধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডোর অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটি ও সব আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে গত ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি বরাবরে অনুরোধ করে পত্র দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফুলকোর্ট সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এটা জনমুখী সিদ্ধান্ত। কারণ বিচারপ্রার্থী জনগণ কোভিডের কারণে আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেনি। এখন বিপদে পড়া বিচারপ্রার্থী জনগণ পুরো বছর জুড়েই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে।
ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, করোনার কারণে বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, আইনজীবীরা পেশা পরিচালনা থেকে বঞ্চিত হন। আর মামলার জট তো অনেক বেড়ে গেছে। এখন এ সময়পোযোগী সিদ্ধান্তে এ তিন সমস্যা কাটবে। এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। আমি খুব খুশি।
ফুলকোর্ট সভার প্রতি কৃতজ্ঞা জানিয়ে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, কারোনার কারণে যে জট লেগেছিল সেটা এখন কিছুটা খুলবে। এ জটের কারণে বিচারপ্রার্থীরা অনেক সমস্যায় পড়েছেন। সেই সঙ্গে আইনজীবীরাও। এই ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তটা আমাদের জন্য অনেক খুশির খবর। এটা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বিশেষ করে বিচারপ্রার্থীরা অনেক উপকৃত হবেন।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিদের নেওয়া সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। কারণ করোনায় আমাদের অনেক সময় এমনিতে চলে গেছে। তবে ছুটিটা হচ্ছে রিলাক্সের জন্য। তাই লম্বা ছুটিতে ৫/৭ দিন রেখে বাকিগুলো বাতিল করলে আর একটু ভালো হতো।
সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, আমাদের ৫ দফা দাবি ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল। এ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা প্রধান বিচারপতির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনালের ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, মামলা জট কমানোর জন্য এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। মহামারি করোনার কারণে অনেক মামলার জট লেগে গেছে। একইসঙ্গে বিচার বঞ্চিত বিচারপ্রার্থীদের আশাও পূরণ হবে।
ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, দীর্ঘ ৫ মাস ধরে অনেক মামলার জট লেগে গেছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের বিষয়টিও ভাবতে হবে। তারাও বিচার থেকেও বঞ্চিত হয়েছিল। এখন ছুটি বাতিলের কারণে মামলার জট কমবে। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনা করবেন। বিচারপ্রার্থীরা প্রতিকার চাইতে পারবেন।
তরুণ আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, এই বছরের সমস্ত ছুটি বাতিল করে উচ্চ আদালত খোলা রাখার সিদ্বান্তকে স্বাগত জানাই। প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সমস্ত বিচারপতিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করছি এমন যুগান্তকারী সিদ্বান্ত নেয়ায়। কারণ, গত ৫ মাসের আগে নিম্ন আদালতে যে সব বিচারপ্রার্থী তাদের আশা অনুযায়ী ফল পাননি তারা তো উচ্চ আদালতে আসতেন প্রতিকার চাইতে। কিন্তু সেটা পারেননি। যদিও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট ছিল, সেখানে অতীব জরুরি ছাড়া অন্য মামলার সুযোগ ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
ইএস/এমজেএফ