ঢাকা: পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে এরকম কোনো কাণ্ড ঘটানো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বুধবার (১৯ আগস্ট) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তারেক রহমানের যাবজ্জীবন হয়েছে নিম্ন আদালতে, তার সাজা বাড়ানোর জন্য কোনো আপিল করবেন কিনা এবং সামগ্রিকভাবে আপিল মামলাটি নিয়ে আপনাদের কর্মপদ্ধতি কী- এমন প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রথমে আমাদের একটি দরখাস্ত করতে হবে এই মামলাটি দ্রুত শুনানির জন্য কোনো একটি বেঞ্চে পাঠিয়ে দিতে। সাধারণত নিচের কোর্টে যদি যাবজ্জীবন দণ্ড হয় সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে ফাঁসির জন্য আপিল করে কোনো লাভ হয় না। কাজেই এ ব্যাপারে যে সাজাটা আছে সেটি যেন বহাল থাকে এটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।
মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, নিশ্চয় আছে। ঘটনা তো অনেক আগের। এই মামলাটার যাতে বিচার না হয়, আসল আসামিরা যাতে ধরা না পড়ে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল। কাজেই মামলাটির শুনানি অগ্রাধিকারভিত্তিতে হবে এটা আমরা মনে করি এবং সে ব্যাপারে আদালতের কাছে প্রার্থনা করবো।
সাজাপ্রাপ্তদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের। তাদের একটি অভিযোগ হচ্ছে এই মামলাটির বিচার হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়।
এ প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, যে ঘটনাটা ঘটেছে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক দল নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্য এরকম কোনো কাণ্ড করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রায় ২৩ জন অন দ্যা স্পট মারা যান। হাসপাতালে মারা গেছেন কয়েকজন। আমাদের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুর আগেও আফসোস করেছেন আমাদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি কি বিচার দেখে যেতে পারবো না। ’ এখানে ওনার স্ত্রীও মারা যান। কাজেই এটা একটি হত্যাকাণ্ড, নিশ্চয় কোনো ভুতে করে যায়নি। সাধারণভাবে একটা বাচ্চারও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে অন্য রাজনৈতিক দল করেছে এটা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর ১১ আসামিকে।
পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। এখন মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত, রায়সহ বই) যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাচাই-বাচাই শেষে এটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
ইএস/এএ