ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের জমি দখলের অভিযোগে হওয়া মামলায় জাল দলিল দেখিয়ে জামিন নেওয়ার সাত মাস পর এক আসামির জামিন বাতিল হয়েছে।
ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ গত জানুয়ারিতে তাকে জামিন দিয়েছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) একই আদালত জামিনের আদেশ বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠান।
ওই আসামির নাম শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন। আসামির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করে শহীদ পরিবারের অনুকূলে সরকারের বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে দুদক এই মামলা করে।
চলতি বছর ৩ জানুয়ারি জাবেদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গত ৭ জানুয়ারি শেখ মো. জাবেদ উদ্দিনকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই দিনই তাকে তিনদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ড শেষে গত ১৪ জানুয়ারি আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ২৩ জানুয়ারি আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন আবেদনে আসামি জাল দলিল ও মামলার রায়ের কথা উল্লেখ করেন।
আসামি জামিন পাওয়ার পরও দুদক তার দলিলের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দলিল ও মামলার আদেশে জালিয়াতির প্রমাণ পায়। তাই দুদক কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আসামির জামিন বাতিলের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আসামি ওই সম্পত্তির মালিকানা বিষয়ে যে দলিল দাখিল করেন তার কপি সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করে দেখা যায়, দলিলটি ওই ব্যক্তির নামে নয়। তিনি জাল দলিল তৈরি করে তা ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া আসামি তার অনুকূলে একটি মামলার ডিক্রি রয়েছে বলে জামিন আবেদনে উল্লেখ করেন। ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকে সেই মামলার নথি তুলে তাতেও গড়মিল পাওয়া যায়।
তাই দুদক কৌঁসুলি বলেন, আসামিপক্ষ আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন নিয়েছেন। এ অবস্থায় আসামির জামিন বাতিলের প্রার্থনা করছি।
দুদকের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে এই আবেদন করা হলেও করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় কোনো কার্যক্রম হয়নি। সাধারণ ছুটি শেষে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২০ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন আদালত। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে বিচারক আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছর ২২ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থার উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। মামলায় রাজধানীর বংশালের শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন ও মিরাজ মো. জাকির উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করেন। সেগুলোর ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি দফতরে জমা দিয়ে শহীদ পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া জমি দখল করে নেন। রাজধানীর ২২১ নবাবপুর এলাকায় অবস্থিত ওই জমির ওপর তিনতলা ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবনের বেসমেন্ট তৈরির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমান মৌজা মূল্য অনুসারে ওই জমির দাম দুই কোটি টাকারও বেশি।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঢাকার নবাবপুর রোডের ওই জমি সরকারি অর্পিত সম্পত্তি। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমিটি শহীদ পরিবারের সদস্য একেএম শামসুল হক খানের মা মাসুদা খানমকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সম্পত্তি বর্তমানে শহীদ পরিবারের সর্বশেষ সদস্য আজহারুল হক খানের নামে আছে। যা ভোগ-দখলে থাকা অবস্থায় শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা জালিয়াতির মাধ্যমে জয়দেবপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল তৈরি করেন। ওই ভুয়া দলিলের গ্রহীতা ননী গোপাল বসাকের মৃত্যুর পর তার ছেলে তপন কুমার বসাক সম্পত্তির মালিক হন মর্মে দাবি করা হয়।
শহীদ পরিবারের নামে বরাদ্দ দেওয়া ওই বাড়ি অবৈধভাবে দখলে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের ডিএমপির লালবাগ বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার (ডিসি) ও বংশাল থানার ওসির বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট ওই ডিসিকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই ডিসির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক এই মামলায় অভিযোগ আনেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
কেআই/এমজেএফ