ঢাকা: কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগে চকরিয়ায় মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে এলাকায় ঘোরানোর ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়েছে। সোমবার (২৪ আগস্ট) বিষয়টি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা ও জামিউল হক ফয়সাল।
পরে জেসমিন সুলতানা বলেন, এ ঘটনা প্রতিটি নারীর জন্য অবমাননাকর। আমরা কোর্টের কাছে তুলে ধরেছি এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকারের লংঘন। নারী অধিকার লংঘন এবং নারী নির্যাতন। চেয়ারম্যানের এমন কোনো ক্ষমতা নেই সে দড়ি দিয়ে দুই মা মেয়েকে ঘোরাতে পারে। এই ঘোরানো আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ঘুরছি আমার পেছনে আমার মেয়ে ঘুরছে।
‘আমরা পত্রিকাগুলো আদালতের নোটিশে নিয়েছি। আদালত দেখেছেন। দেখার পরে আদালতকে ইনফর্ম করা হয়, প্রশাসন একটা ব্যবস্থা নিয়েছে ইনকয়ারির জন্য। আদালত বললেন- যেহেতু একটা নির্দেশনা (ইনকয়ারি) এসেছে এটার বাস্তবায়ন হয় কিনা, এটা কী হচ্ছে আমরাও দেখি আপনারাও দেখেন। ’
জেসমিন সুলতানা আরও বলেন, আপাতত আমরা মনে করি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোর্ট ও জেলা প্রশাসন দু’পক্ষই ইনকয়ারির ব্যবস্থা করেছে। আমরা এটার রিপোর্ট দেখি, আমরা মনে করি এটাও ইতিবাচক দিক। আমরা এটার বিচার পাবো সুবিচার পাবো।
এদিকে সোমবার চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত ওই মা ও মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
শনিবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অভিযোগে মা ও মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে এলাকায় ঘুরিয়েছে স্থানীয় লোকজন। পরে সেখান থেকে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এরকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গরুর মালিক চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক চকরিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এ দুই নারী ও অজ্ঞাত অটোচালকসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনির পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য।
এদিকে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পাশাপাশি এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে মারতে মারতে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এসময় ভিডিওতে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকেও দেখা যায়।
পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার।
এছাড়া চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২০
ইএস/এএ