ঢাকা: টেলিভিশনে ইসলামিক অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী নিজ বাসায় খুন হয়েছিলেন ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট। সেই ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেছে।
বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে- এমন আশার কথাও শোনাতে পারছেন না সিআইডির কর্মকর্তা।
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে খুন হন ইসলামিক ফ্রন্ট নেতা মাওলানা ফারুকী। ওই দিন এশার নামাজের পর অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী ও এক ছেলেসহ তিন স্বজনের হাত-পা বেঁধে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করেন।
ঘটনার পরদিন তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ হত্যা মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশের কাছে থাকলেও পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। ডিবিতে স্থানান্তরের এক বছর পর ২০১৫ সালের শেষের দিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
শুরুতে তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির পরিদর্শক আরশেদ আলী মণ্ডলকে দেওয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রাজিব ফরহান তদন্তের দায়িত্ব পান।
একাধিক তদন্ত সংস্থায় দফায় দফায় কর্মকর্তা বদলি হলেও তদন্ত এখনও আলোর মুখ দেখছে না। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
মামলায় গ্রেফতারকৃত হাদিসুর রহমান সাগর, আব্দুল গাফ্ফার, মিঠু প্রধান ও খোরশেদ আলম নামে চার আসামি কারাগারে রয়েছেন। রাকিব ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাকিব, তারেকুল ইসলাম মিঠু, আলেক বেপারী ও মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ নামে আরও চার আসামি জামিনে আছেন।
সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ মে হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত নব্য জেএবির অন্যতম শীর্ষ নেতা হাদিসুর রহমান সাগর ফারুকী হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা করায় ফারুকীকে হত্যায় ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় আগেও বেশ কয়েকবার বৈঠক করেন জঙ্গিরা। সবশেষ তারাই তাকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন নয়জন। এর মধ্যে তিনি ছাড়াও রয়েছেন সারোয়ার জাহান মানিক, তাসনিম, আনোয়ার হোসেন ওরফে জামাই ফারুক, রজব, ইমন, রফিক, নাইম ও আশফাক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সারোয়ার জাহান মানিক মারা যান। আর স্বীকারোক্তির আগেই ২০১৭ সালে জামাই ফারুক ভারতে গ্রেফতার হন।
মামলার তদন্তের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রাজিব ফরহান বলেন, এ মামলাটি একেক সময় একেক দিকে মোড় নিয়েছে। শুরুতে এক ধরনের মোটিভ নিয়ে তদন্ত এগোচ্ছিল। ডিবির কাছে হস্তান্তরের পর তদন্ত অন্যদিকে মোড় নেয়। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আমি এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছি। এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
তিনি আরও বলেন, মামলায় গ্রেফতারকৃত একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আরও একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে চাইলেও করোনা পরিস্থিতিতে তাকে আদালতে হাজির করতে পারিনি। এছাড়া সন্দেহভাজন একজন দেশের বাইরে আছেন। পলাতক আছেন কয়েকজন। এসব কারণেই তদন্তে কিছুটা সময় লাগছে। এখন আদালত খুলেছে, আশা করছি, তদন্ত একটা ইতিবাচক ফলের দিকে যাবে।
তবে কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগছে বলে এ মামলা নিয়ে একটা নেতিবাচক বার্তাও যাচ্ছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও এ নিয়ে হতাশ।
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী জাইদুর রহমান বলেন, তদন্তে দীর্ঘ লাগছে। এর কারণে আসামিদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। ধার্য তারিখে তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আসামিদের মধ্যে অনেকে গরিব, তাদের জন্য এটা একটা হয়রানিও। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পেলে তারা অব্যাহতি পাবেন। আর জড়িত থাকলে বিচার শুরু হবে। কিন্তু এখন দু’টোর কোনোটিই হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২০
কেআই/এসআই