ঢাকা: করোনা পরীক্ষা না করে মনগড়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী, তার স্বামী ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে বাদী কামাল হোসেন তার জবানবন্দি দেন।
এরপর আসামিপক্ষ তাকে জেরা শুরু করেন। পরে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অসমাপ্ত জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ২০ আগস্ট একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। ওইদিনই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
বিচার শুরু হওয়া অন্য আসামিরা হলেন— আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। সাক্ষ্যগ্রহণর জন্য আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিন আসামি আরিফুল হক চৌধুরী ও সাঈদ চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবীরা চার্জগঠনের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন জানিয়ে সময় আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে বাদীর সাক্ষ্য নেন।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ এ তথ্য জানান।
গত ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অভিযোগপত্রটি দেখার পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত তা বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন। এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে আসে।
মামলার অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফুলকে জালিয়াতি, প্রতারণার মূল হোতা এবং বাকি ছয়জনকে অপরাধে সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক। জেকেজির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ডা. সাবরিনা আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়।
গত ১২ জুলাই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেকেজির প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরদিনে ১৩ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। সাবরিনার রিমান্ড চলাকালেই গত ১৫ জুলাই কারাগারে থাকা তার স্বামী আরিফুলকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৭ জুলাই সাবরিনাকে ফের দু’দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ডে নিয়ে দু’জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
গত ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।
এছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও পাওয়া যায়। কলেজের কক্ষে নারী-পুরুষের আপত্তিকর অবস্থানসহ নানা অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফুলের লোকজন।
অভিযোগ পাওয়া যায়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন আরিফ। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
জানা যায়, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২০
কেআই/এএ