নারায়ণগঞ্জ: গণধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে তিন আসামি স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে উপস্থিতি হয়ে ওই আবেদন জানান তিন আসামি।
পরে আদালত তা গ্রহণ করে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত তিন আসামির জামিন ও কিশোরীর স্বামীর রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. রোকন উদ্দিন বলেন, ‘অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমান আদালতে তাদের দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে উল্লেখ করেছেন তাদের রিমান্ডে ভয়ভীতি দেখিয়ে এ স্বীকারোক্তি নিয়েছে এবং তাদের বলা হয়েছে এ স্বীকারোক্তি দিলে তাদের আর রিমান্ডে আনা হবে না। সেজন্য তারা ওই স্বীকারোক্তি দেয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৫ আগস্ট আবেদন করা তিন আসামির জামিন শুনানির সোমবার ধার্য তারিখ ছিল। আদালত তিন জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন। একইসঙ্গে কিশোরীর স্বামী ইকবালকে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনও নামঞ্জুর করেন আদালত। তাই আগামী বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) আমার জেলা দায়রা জজ আদালতে তিন আসামির জামিন আবেদন করবো।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট এ ঘটনায় দুই কর্মদিবসের মধ্যে ‘কীভাবে মৃত ব্যক্তি জীবিত হলো এবং কেন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত করা হলো’ এ বিষয়ে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান ও সদ্য ক্লোজড হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুনকে লিখিত ব্যাখ্যাসহ কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সদর থানার ওসি ও এসআই শামীম কেউ আদালতে হাজির হননি। যেহেতু দুই কর্মদিবসের মধ্যে বলেছিল আদালত সেহেতু আগামীকালও তাদের সময় রয়েছে। ’
আসামি আব্দুল্লাহর বাবা আজমত হোসেন বলেন, ‘তাদের মেয়ে জীবিত ফিরে এসে বাসায় আছে। তাহলে আমার ছেলে কেন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকবে। অবিলম্বে আমার ছেলেসহ তিন জনের মুক্তি চাই। ’
এর আগে চলতি বছরের ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় কিশোরী জিসা মণি। মেয়ে নিখোঁজের প্রায় দু’সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। পরদিন ওই মামলায় পুলিশ বন্দরের খলিলনগর এলাকার আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইকচালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানি খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে (৩৬) গ্রেফতার করে।
গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা।
স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুলছাত্রীকে নৌকায় করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা। এখন তিন জন কারাগারে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত আব্দুল্লাহর সঙ্গে ওই কিশোরী দেখা করে। পরে রাতে ইকবাল নামে সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। দু’জন বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকে।
গত ২৩ আগস্ট দুপুরে জিসা তার মা রেখাকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। পরে সকালে পুলিশ কুশিয়ারা থেকে জিসাকে উদ্ধার করে এবং তার স্বামী ইকবালকে আটক করে। ’
এদিকে ‘কিশোরী জীবিত’ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন যুবকের পরিবারের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তাদের তিনটি পরিবারের কাছ থেকে ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপরও রিমান্ডে নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ আগস্ট এসআই শামীমকে সদর থানা থেকে পুলিশলাইনে সংযুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
এএটি