ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি চলছে।
বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শুরু হয়।
এদিন শুরুতেই মামলায় নিযুক্ত চিফ পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ও বুয়েট কর্তৃপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগ গঠনের আর্জি জানান। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদনের উপর শুনানি করছেন।
এর আগে গত ৯ আগস্ট ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ গঠনের জন্য ২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ২২ মার্চ এই আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য বদল হয়ে আসে। ওই দিনই আদালত অভিযোগ গঠনের জন্য ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ হয়ে গেলে সেই শুনানি আর হয়নি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ সরকারি দফতরে চিঠি দেন। পরে গত ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১ নম্বরে স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। গেজেটের পর গত ১৮ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন।
এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের প্রসিকিউশন প্যানেলও ঘোষণা করা হয়। মোশারফ হোসেন কাজলকে চিফ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং এহসানুল হক সমাজী ও মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞাকে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
পরে ১৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা অনুযায়ী গ্রেফতার করতে না পারায় গত ৩ ডিসেম্বর তাদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারির মধ্যে ক্রোকী পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি পলাতক আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের একদিন আগে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক থাকলেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম মামলার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন।
এরপর দুই দফায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন রাখা হলেও মামলাটি দ্রুত বিচারে স্থানান্তরের গেজেট না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে যায়।
মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ৬ জন। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, ইফতি মোশাররফ, অমিত সাহা, মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের মধ্যে যারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে।
গ্রেফতারদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ।
এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০
কেআই/এইচএডি