ঢাকা: নীলা রায়ের প্রতি আসক্তি দেখে দুই মাস আগে মিজানুর রহমান চৌধুরীকে বিয়ে করিয়ে দেন তার বাবা-মা। তবুও সে নীলাকে ভুলতে পারেনি।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন কথাই জানায় সে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর মিজানকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান একটি আদালত। সেই রিমান্ডের পঞ্চম দিনেই মিজান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়।
তাই সেই জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার এসআই নির্মল চন্দ্র ঘোষ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় মিজানের বাবা-মাকে এজাহারভুক্ত করা হলেও ঘটনায় তাদের উপর কোনো দায় দেননি মিজান। জবানবন্দিতে মিজান দাবি করে, ফেসবুকের সূত্র ধরে নীলার সঙ্গে পরিচয় হয় কলেজ ছাত্র মিজানের। এরপর থেকে সে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বেশ কয়েকবার নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তবে সেই প্রস্তাবে নীলা রাজি হয়নি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন মিজান নীলার দেখা পায়নি। এ অবস্থায় নীলার থেকে ছেলেকে ফেরাতে মাস দুয়েক আগে মিজানকে অন্যত্র বিয়ে দেন তার বাবা-মা। এতেও নীলার পিছু ছাড়েনি মিজান। সবশেষ ঘটনার দিন নীলা তার ছোট ভাই অলককে নিয়ে সাভার বাজারে যায়।
এ সময় দুই আসামি সেলিম ও রাকিবকে ফোন দেয় মিজান। জবাবে তারা মিজানকে বলে যা করার আজকেই করতে হবে। তাই সেখান থেকে ফেরার পথে সাভার দক্ষিণপাড়া পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে তাদের পথরোধ করে মিজান।
তখন নীলার ছোট ভাই অলককে মিজান বলে তুমি অপেক্ষা কর আমাদের ওর (নীলার) সঙ্গে একটু কথা আছে। একথা বলে অলককে রিকশায় রেখে নীলাকে নিজেদের পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় মিজান। এ সময় ফের নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। নীলা ফের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে মিজান। নীলাকে মারার সময় বাহিরেই ছিলেন তার দুই বন্ধু সেলিম ও সাকিব।
এরপর মিজান রাজফুলবাড়ীয়ার দিকে চলে যায়। পথিমধ্যে উলাইলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি ফেলে দেয় মিজান। এরপর পালিয়ে ঘন ঘন স্থান ত্যাগ করে সে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে রাজফুলবাড়িয়া কর্নেল ব্রিকস ফিল্ড এলাকা থেকে মিজানকে গ্রেফতার করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল জানান, মিজান জবানবন্দিতে অনেক কিছুই বলেছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও এই জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে নীলার উপর হামলার পর তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পৌর এলাকার কাজী মোকমা পাড়ার এক বাড়িতে তার পরিবার ভাড়া থাকতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২০
কেআই/জেআইএম