ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মৃত জেনেও ফাহাদকে মেডিক্যালে নিতে চাপ দেন ছাত্রলীগের রাসেল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
মৃত জেনেও ফাহাদকে মেডিক্যালে নিতে চাপ দেন ছাত্রলীগের রাসেল

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে এসে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন বুয়েট কোয়ার্টারের সহকারী চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাসুক এলাহী। এরপরও বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

 

রোববার (১১ অক্টোবর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে জবানবন্দিতে বুয়েট কোয়ার্টারের সহকারী চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাসুক এলাহী একথা বলেন।  

জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এ নিয়ে মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো। আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ মামলার ধারাবাহিক সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

জবানবন্দিতে ডা. মাসুক এলাহী বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের রাতে বুয়েটের উত্তর গেটে ১০/১৫ জন ছাত্র অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে ধরে এবং আমাকে দ্রুত অক্সিজেন ও স্ট্রেচার নিয়ে যেতে বলে। আমি তখন বলি, আগে রোগী দেখবো। তারপর শেরেবাংলা হলের উত্তর ব্লকের সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। সিঁড়ির একতলা ও দোতলার মাঝে যে জায়গা থাকে সেখানে ফাহাদকে শোয়ানো দেখি। তার শরীরে চেক শার্ট ও পরনে কালো ট্রাউজার ছিল। ট্রাউজার ও তোশক প্রস্রাবে ভেজা ছিল।

মাসুক এলাহী বলেন, প্রথম দেখাতেই আবরারকে আমার মৃত মনে হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার পালস, ব্লাড প্রেসার, শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্ট সাউন্ড শোনার চেষ্টা করেও হার্ট সাউন্ড পাইনি। এরপর টর্চ দিয়ে চোখ পরীক্ষা করি এবং আবরারকে মৃত ঘোষণা করি।

জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, আবরারকে মৃত ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে পাশে যারা ছিল তারা সবাই পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর রাসেল নামে একটি ছেলে এসে নিজেকে বুয়েটের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি বলে পরিচয় দেয়। সে আবরারকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলে। আমি তখন বলি, আবরার মৃত। তাকে মেডিক্যালে নিয়ে লাভ নেই। তাকে দ্রুত পুলিশে হস্তান্তর করতে হবে। রাসেল বলে, সে মারা যায়নি। সে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও সে কথা বলেছে। বারবার তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে থাকেন। আমি ফের রাসেলকে একই কথা বলি।  

তিনি আরও বলেন, রাত তিনটার দিকে হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খানকে ফোন দিয়ে আবরারের মৃত্যুর সংবাদ জানাই এবং তাকে হলে আসতে বলি। এর ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক শাহিনুর রহমান, সহকারী প্রভোস্ট ইফতেখার হলে আসেন। এরপর তারা রাসেলের নির্দেশে আবরারকে হলের নিচতলার বারান্দায় নিয়ে যান। তখন একজন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে চাদর নিয়ে আবরারের মরদেহটি ঢেকে দিই।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা ছিল। তবে ওইদিন আদালতে হাজির হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চান। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক ৫ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। এরপর গত ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনাল টিমের প‌রিদর্শক মো. ওয়া‌হিদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  

গ্রেফতারকৃতদের ম‌ধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

এখন পলাতক আর তিন আসা‌মি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রা‌ফিদের নাম এজাহারে ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
কেআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।