ঢাকা: নারী ও তের বছরের ঊর্ধ্বে কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণের আইন নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
চারটি সংস্থার করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আবেদনকারী চারটি সংস্থা হলো- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নারীপক্ষ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। গত ১ নভেম্বর এ রিট করা হয়।
রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জেনিফা জব্বার ও শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
পরে ব্লাস্ট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নারী ও তের বছরের ঊর্ধ্বে কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণ অনুমোদনকারী আইনসমূহ যা বৈষম্যমূলক এবং বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের মৌলিক অধিকার সমতা, বৈষম্যহীনতা, আইনের সুরক্ষা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা ক্ষুণ্ন করে, তা কেন বাতিল হবে না, এবং এই আইনসমূহ বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচবি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কিত ব্যতিক্রম দফা এবং এ সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারা, যেগুলো বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (তের বছরের ঊর্ধ্বে) স্বামী কর্তৃক ধর্ষণের বিচার প্রাপ্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করে। এসব ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।
ব্লাস্টের গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবীর হুদা বলেন, টাঙ্গাইলের শিশু কনের মর্মান্তিক মৃত্যু আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। কোনো নারীরই বৈবাহিক ধর্ষণ কাম্য নয়। তা অবশ্যই অপরাধের আওতায় আনতে হবে। অনেক দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে দাবি জানানো হচ্ছিল।
টাঙ্গাইলের ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলে চৌদ্দ বছরের এক কিশোরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে যৌনাঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত ৩৪/৩৫ বৎসর বয়সী এক ব্যক্তির সাথে একমাস পূর্বে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার বিয়ে হয়েছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ওই কিশোরীর যৌনাঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ধর্ষণ আইন সংস্কারের দাবিতে রেইপ ল’ রিফর্ম কোয়ালিশনের ১০ দফা দাবির পুনরায় বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরা হয় এবং জোরপূর্বক যৌনমিলনের ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে বিবাহিত কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত জাতীয় সমীক্ষায় (২০১৫) জানা গেছে যে, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বিবাহিত নারী প্রতিনিয়ত তাদের স্বামীদের দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, যার মধ্যে জোরপূর্বক যৌনমিলন অন্তর্ভুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (তের বছরের ঊর্ধ্বে) সাংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ৪টি মানবাধিকার সংস্থা ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের সংস্কার করে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চেয়ে এই রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
ইএস/এমজেএফ