ঢাকা: কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় একমাত্র আসামি মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মজনুকে এজলাসে নেওয়া হয়। কড়া পুলিশ বেষ্টনির মধ্যে কাঠগড়ায় থাকলেও এক পর্যায়ে মজনু সেখানে হইচই শুরু করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মারতেও উদ্যত হয় সে। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে কান্নাকাটি করে। আবার কখনও উপস্থিত আইনজীবী ও পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে গালাগালি করতে থাকেন।
এমতাবস্থায় বিকেল তিনটার ১০ মিনিট আগে এজলাস কক্ষ থেকে উপস্থিত সব সংবাদকর্মী ও আইনজীবীদের বের করে দেওয়া হয়। পরে প্রায় জনশূন্য আদালতে বিকেল তিনটার দিকে মজনুর দণ্ড ঘোষণা করা হয়। রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারা অনুযায়ী মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিদিধির ৩৯৪ ও ৪১১ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেওয়া হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট। মজনুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতার, ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর শনাক্তকরণ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে আমরা আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। তাই আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আসামিকে এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে রায়ের কথা জানিয়েছি। তারা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
তবে মজনুর পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই এ মামলায় যে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তাতে আসামি ন্যায়বিচার পায়নি। সে ইচ্ছা করলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবে।
গত ১২ নভেম্বর এ মামলায় একমাত্র আসামি মজনুর আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
গত ৫ নভেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ সাক্ষীর ২০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
চলতি বছর ১৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ আগস্ট আসামি মজনুর বিচার শুরু হয়। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর বাবার সাক্ষ্যর মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরদিন ভুক্তভোগী সাক্ষ্যে মজনুকে ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করেন।
গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
কেআই/ওএইচ/