ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে প্রচণ্ড মারধরের পর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকেন। এসময় তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও বাধা দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন ও ক্রীড়া সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন।
এই মামলায় রোববার (২২ নভেম্বর) ২৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন মো. ইসমাইল। যিনি বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০০৮ নম্বর কক্ষে থাকেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, রাত পৌনে ২টার দিকে রুমমেট আকাশ ঘটনার দিন আমাকে বলে শিবির সন্দেহে একটি ছেলেকে খুব পিটিয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। আমি আকাশকে সঙ্গে নিয়ে নিচে নামি। আকাশও আমার সঙ্গে আসে। তখন আমরা দু’জন রুমে গিয়ে পড়তে বসি। রুমে আসার আধঘণ্টা পর আকাশ ‘ইস’ শব্দ করে খুব আফসোস করছিল। বলছিল, ছেলেটাকে খুবই বাজেভাবে মেরেছে। তখন আমি বলি ছেলেটার কী অবস্থা গিয়ে দেখে আয়। আকাশ তখন রুম থেকে বেরিয়ে ছেলেটাকে দেখতে যায়।
এরপর বাইরে কোলাহল শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আমি ক্যান্টিনের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মেহেদি হাসান রবিন ভাই, মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন ভাই, তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুনতাসির আল জেমি, এহতেশাম রাব্বি তানিমসহ আরও কয়েকজনকে দেখি। এরপর হলের কিছু ছেলে এসে রবিন ও জিয়ন ভাইকে বলেন, ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। তখন রবিন ভাই ও জিয়ন ভাই বলে যে, তোরা শিবির চিনিস না ও অভিনয় করছে।
এরপর আমি আবরারের কাছে গিয়ে দেখি সে খুবই মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি রবিন ভাইকে বলি যে, তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। জিয়ন ভাই আমাকে বাধা দিয়ে বলে ও অভিনয় করছে। তুই ওকে চিনিস না। আমি তখন রবিন ভাইকে আবারও গিয়ে বলি, ভাই অন্তত অ্যাম্বুলেন্সটা এনে রাখেন। রবিন ভাই তখন আমাকে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার অনুমতি দেন। আমি তখন হলের ফোন থেকে বুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে ফোন করি এবং তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক্তারকে আসার জন্য বলি। তার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক্তার আসেন।
আমি তখন ডাক্তারের সঙ্গে আবরারের কাছে যাই। ডাক্তার তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন যে, রোগী তো নেই। তখন আমি আকস্মিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের ১০০৮ রুমে নম্বরে চলে আসি।
জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। এদিন মামলার ৩০তম সাক্ষী শেরেবাংলা হলে মেসবয় আব্দুল কাদের সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।
গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গ্রেফতারদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
কেআই/এএ