রাজশাহী: রাজশাহীতে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। পরে এই অভিযোগে সংঘবদ্ধ অপরহণকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
রোববার (২২ নভেম্বর) সকালে তাদের পবা উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিকেলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
অপহরণের শিকার ব্যক্তি হলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার জাহানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হক (৪৩)।
অভিনব এ ঘটনায় পবা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের চার সদস্য হলেন- রাজশাহীর পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের নার্গিস নাহার ওরফে হেলেন (৫৫), রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানার নওদাপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম (৩০), বোয়ালিয়া থানার অলোকার মোড় এলাকার আতিকুর রহমান বাপ্পী (২৮) এবং চন্দ্রিমা থানার হজের মোড় এলাকার হামিম আল ফজলে নূর ওরফে শুভ্র (২৮)।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) আবদুল হক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার চাচাকে দেখতে যান। এসময় সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা অপহরণকারীচক্রের সদস্য নার্গিস নাহার ওরফে হেলেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর হেলেন আবদুল হকের কাছে তার মোবাইল ফোন নম্বর নেন। এর পরের দিন শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে হেলেন বেশ কয়েকবার আবদুল হককে ফোন করেন। দুপুর ১২টার দিকে হেলেন রাজশাহী মহানগরীর বায়া বাজারে আবদুল হককে আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। আবদুল হক হেলেনের ডাকে সাড়া দিয়ে বায়া বাজারে আসেন। এসময় হেলেন কৌশলে একটি অটোরিকশায় আবদুল হককে উঠিয়ে নেন। এরপর তাকে নিয়ে হেলেন তার পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে চলে যান।
সেখানে অপহরণকারী চক্রের আরও তিন সদস্য রফিকুল, বাপ্পী ও শুভ্র হাজির হন। তারা আবদুল হককে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে আবদুল হকের স্ত্রী রহিমা বেগমের কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হবে, নতুবা মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।
পরে আবদুল হকের স্ত্রী তার নম্বরে ২০ হাজার টাকা বিকাশে দেন। অপহরণকারীরা আবদুল হকের মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়ে ২০ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করেন। এরপর গত শনিবার (২১ নভেম্বর) রাত নয়টার দিকে অপহরণকারীরা পবা উপজেলার করমজার মোড়ে মোটরসাইকেলে করে আবদুল হককে নামিয়ে দেয়। পরে তার স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পবা থানা পুলিশ এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে।
আরএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা অপহরণকারী সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এদের বিরুদ্ধে চন্দ্রিমা থানায় আরও দুইটি মামলা আছে। অপহরণের ঘটনায় আবদুল হকের স্ত্রী রহিমা বেগম পবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অপহরণকারীচক্রের চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) এর শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আদালতে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে তাদেরকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশ এই চক্রের মূল হোতা ও আর সদস্যকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও জানান মহানগর পুলিশের এই অতিরিক্ত উপ-কমিশনার।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
এসএস/ওএফবি