ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব অস্ত্র সংরক্ষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
গত ৫ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বেচতে চায় সরকার’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ১৫ নভেম্বর রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান (পান্না) ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, শামসুদ্দিন বাবুল, সৈয়দা নাসরিন ও শাহীনুজ্জামান।
শাহীনুজ্জামান জানান, আদালত অস্ত্র বিক্রির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন চেয়েছেন। এছাড়া রুলও জারি করেছেন। রুলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহার করা অস্ত্র বিক্রি/ আগ্নেয়াস্ত্র স্থানান্তর কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অবিলম্বে ওইসব অস্ত্র সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব ও বাণিজ্য সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছে, এমন আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সরকার বেচে দিতে চায়। সরকারের যুক্তি হচ্ছে এগুলো পুরনো, অপ্রচলিত ও যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অকার্যকর। ফলে রাখার কোনো দরকার নেই। প্রাচীন নিদর্শন বা স্মৃতিচিহ্ন (অ্যান্টিক সুভ্যেনির) হিসেবে অস্ত্রগুলো কিনে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ও সুইজারল্যান্ডের একটি অস্ত্র আমদানিকারক কোম্পানি।
এদিকে পুরনোর পাশাপাশি নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানিরও উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রথম উদ্যোগটি নেওয়া হয় ১৬ বছর আগে। এ বিষয় নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
রপ্তানি করতে চাওয়া পুরনো অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যে তৈরি ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১; ৯ এমএম স্টেন এসএমজি এমকে-২ ও সিএম ৯ এমএম স্টেন এ১; ভারতে তৈরি ৭.৬২ এমএম এসটিআর এল১ এ১ /১ এ ১ ও রাইফেল জি-৩; পাকিস্তানে তৈরি ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭; যুক্তরাষ্ট্র/রাশিয়া/জাপানে তৈরি পিস্তল ও রিভলবার ৭০০ এবং জার্মানি/যুক্তরাজ্য/ভারতে তৈরি এলএমজি এইচকে ১১ এ১ সিএএল ৭.৬২ * ৫১।
আট শ্রেণি মিলিয়ে অস্ত্রের মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৬২। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৪৫৪টি হচ্ছে ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১। আর সবচেয়ে কম ১১৫টি হচ্ছে ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭।
বিদ্যমান রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে নতুন, পুরনো বা অচল—কোনো ধরনের অস্ত্র রপ্তানিরই সুযোগ নেই। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (এভরিথিং বাট আর্মস) নীতি অনুসরণ করে আসছে।
তারপরও এগুলো রপ্তানির একটি পথ বের করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা (বিওএফ) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে এ নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে আমার কাছে কোনো ফাইল আসেনি। এলে দেখা যাবে কী করা যায়। ’
বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আজম বলেন, এ নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি এখনো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
ইএস/এএ