ঢাকা: প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ আদালতে উপস্থাপনের পর বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে, পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। উজ্জল কুমার নন্দীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন ও অমিতাভ অধিকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ২ ডিসেম্বর আদেশানুসারে দুদক সবকিছু উপস্থাপন করেছেন। আজ দুইজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পক্ষভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বক্তব্য ৩ জানুয়ারির মধ্যে দাখিল করতে বলেছেন। এছাড়া প্রশান্ত কুমার হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানোর বিষয়ে এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে দুদকের কাছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুদককে ৩ জানুয়ারি মধ্যে এসব বিষয়ে অগ্রগতি আদালতে দাখিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুনানির সময় আদালত বলেছেন-আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। দিনটা খুব ভালো দিন। তবে দুর্নীতি বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।
১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন, তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।
২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এ আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানান, পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর রোববার দেশে ফিরছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
ইএস/ওএইচ/