ঢাকা: মায়ের অনৈতিক সম্পর্কের বলি হতে হলো পাঁচ বছরে নিষ্পাপ শিশুকে। এক দশক আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শিশু সামিউল আজিম ওয়াফি হত্যা মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত এ কথা বলেন।
আদালত রায়ে বলেছেন, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে আসামি শামসুজ্জামান আরিফ ওরফে বাক্কুর সঙ্গে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়ান এশা। নিজের সন্তান শিশু সামিউল তাদের সেই অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ঘটনা দেখে ফেলে। স্বামীকে এ শারীরিক সম্পর্কের কথা বলে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় এশা শিশু সন্তানকে হত্যায় পরকীয়া প্রেমিককে প্ররোচিত করেন। তার প্ররোচণায়ই প্রেমিক আরিফ শিশু সামিউলকে অপহরণ করে হত্যা করে। সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে যে, সামিউলকে অপহরণের পর থেকেই প্রেমিকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছে এশা। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে হত্যা করে বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দেয় সে।
আদালত বলেন, উপরোক্ত ঘটনায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মায়ের বিয়ে বহির্ভূত অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের শিকার হতে হলো নিষ্পাপ শিশু সামিউলকে। তাই হত্যায় সরাসরি অংশ না নিলেও একমাত্র সন্তানকে হত্যায় মায়ের যে প্ররোচণা ও সহায়তা তাতে সে অনুকম্পা পেতে পারে না। মৃত্যুদণ্ডই তার জন্য একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি। এরপর আদালত দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। উভয় আসামি জামিন নিয়ে পলাতক হন। তাই আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার নথি হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত মামলার রায়ের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ২০ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
২০১০ সালের ২৩ জুন প্রথমে সামিউলকে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ গুম করতে ফ্রিজে ঢুকানো হয়। পরে মরদেহটি বস্তায় ঢুকিয়ে ২০১০ সালের ২৪ জুন রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। সামিউল রাজধানীর মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিংয়ের গ্রিনউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংলিশ মিডিয়ামে প্লে-গ্রুপের ছাত্র ছিল।
গত ২৪ জুন সামিউলের মরদেহ আদাবরের নবোদয় হাউজিং এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা কে এ আজম বাদী হয়ে ২৪ জুন আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এশা ও বাক্কু উভয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর এশা ও বাক্কুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটিতে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
কেআই/আরবি