ঢাকা: আড়াই মাস বয়সী শিশুসহ কিশোরী মাকে স্বামীর জিম্মায় দিতে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কিশোরীটি গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালিকা) থাকার সময় গত অক্টোবরে জন্ম নিয়েছিল ওই শিশু।
কিশোরীর স্বামীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওই কিশোরীর মতামত নিয়েই এ আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. তারেক আজিজ ও সজল আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে পালিয়ে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের ওই কিশোরী পরিবারের অমতে তার প্রেমিককে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের কাবিনে মেয়েটির বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছর।
একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ থানায় ওই কিশোরীর স্বামীর বিরুদ্ধে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করা। মামলায় মেয়েটির বয়স দেখানো হয়েছে ১৩ বছর ১১ মাস। যদিও জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী কিশোরীর বয়স ২১ বছর। আবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মেয়েটি তার বয়স ১৬ বছর বলে উল্লেখ করেছেন।
মামলার পর ২০২০ সালের ২৬ মে ওই মেয়ের স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে মেয়েটিকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। এরমধ্যে কিশোরীটি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
গ্রেফতারের পর কিশোরীর স্বামীকে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠায়। সেদিন কিশোরীর মা মেয়েকে নিজের জিম্মায় নিতে আবেদন করেন। কিন্তু কিশোরীটি পরিবারের কাছে ফিরতে না চাইলে ট্রাইব্যুনাল তাকে সেফ কাস্টডিতে (গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে) পাঠানোর আদেশ দেন।
পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হাইকোর্টে কিশোরীর স্বামী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
তাকে ২০ অক্টোবর জামিন দেন হাইকোর্ট। এ অবস্থায় গত বছরের ২৭ অক্টোবর গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ওই কিশোরী একটি সন্তানের জন্ম দেন।
এদিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে কিশোরীর স্বামী নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের জিম্মায় পেতে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। গত বছরের ১০ নভেম্বর সে আবেদন না মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল। তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
শুনানি নিয়ে গাজীপুরের শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ককে কিশোরী ও তাদের সন্তানকে আদালতে নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে বৃহস্পতিবার কিশোরী ও সন্তানকে হাজির করা হয়। তখন আদালত কিশোরী ও তার স্বামীর মতামত নিয়ে আদেশ দেয়।
পরে শেখ আলী আহমেদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ চাঁদপুরের ট্রাইব্যুনালে যাবে। এরপর ট্রাইব্যুনাল আদেশটি শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রকে পাঠাবেন। তখন মেয়েটি তার স্বামীর জিম্মায় যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
ইএস/আরবি