ঢাকা: রাজধানীর কাকরাইলে মা-ছেলে শাওন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য রোববার (১৭ জানুয়ারি) দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এ দিন দুপুরে মামলার রায় ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
এই মামলার তিন আসামি হলেন- নিহত গৃহকর্ত্রীর স্বামী আব্দুল করিম, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা এবং শ্যালক তথা মুক্তার ভাই জনি। তিন আসামিই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। অপরদিকে, আসামিপক্ষের দাবি ঘটনায় প্রকৃত খুনিদের আড়াল করা হয়েছে। তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
গত ১০ জানুয়ারি এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সেদিনই আদালত রায়ের জন্য ১৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর সাবিনা আক্তার দিপা বলেন, আমরা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। এখানে আব্দুল করিম, তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও শ্যালককে নিয়ে প্রথম স্ত্রী ও সেই স্ত্রীর সন্তানকে হত্যা করেছে। এটি একটি নির্মম ঘটনা। মামলায় যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।
অপরদিকে, আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী রুহুল আমিন খান বলেন, আমরা মনে করি সাক্ষীদের জেরায় এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, আসামিরা নির্দোষ। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে এই আসামিদের মামলায় জড়িত করা হয়েছে। আমরা চাই মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের বের করে আনা হোক। যেহেতু এই আসামিরা অপরাধী নন, তাই রায়ে তারা খালাস পাবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
ঘটনার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কাকরাইলের পাইওনিয়র গলির ৭৯/১ নম্বর বাসার গৃহকর্তা আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে (১৯) হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন রাতে নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আব্দুল করিম, করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা, মুক্তার ভাই জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক শামসুন্নাহার করিমের স্বামী আবদুল করিম ও করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী মডেল শারমিন মুক্তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ঘটনার দুদিন পর গোপালগঞ্জ থেকে আরেক আসামি জনিকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। এই মামলায় আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিন আসামিই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৮ সালের ১৬ জুলাই এই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটি বদলি হয়ে এই আদালতে আসে।
২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ১ নভেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২ সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের পরীক্ষা ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার বিচার কাজ শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
কেআই/এমআরএ