ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সাগর-রুনি হত্যার নয় বছর: ৭৮ বার সময় নিয়েও শেষ হয়নি তদন্ত

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
সাগর-রুনি হত্যার নয় বছর: ৭৮ বার সময় নিয়েও শেষ হয়নি তদন্ত

ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে পেরিয়ে গেছে নয় বছর।

কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি নেই। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে নয় বছর পেরিয়ে একাধিক সংস্থার হাত বদলেও দাখিল হয়নি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এরইমধ্যে আদালত থেকে ৭৮ বার সময় নেওয়া হয়েছে।

সবশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী আগাম‌ী ১১ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন।  

সবশেষ গত বছরের ৩ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে দাখিল করা অগ্রগতির প্রতিবেদনে বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’জন অপরিচিত ব্যক্তি জড়িত ছিল। সাগরের হাতে বাঁধা চাদর ও রুনির টি-শার্টে ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএ’র প্রমাণ মিলেছে।

অপরাধীদের শনাক্ত করতে ডিএনএ প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ল্যাব যথাক্রমে ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস ও প্যারাবন স্ন্যাপশট ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি ডিএনএ’র মাধ্যমে অপরাধীর ছবি বা অবয়ব প্রস্তুতের প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে।

তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দফতরের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

দীর্ঘ এ সময়েও তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির। তিনি আদালত পাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, নয় বছর হয়ে গেলো এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। মামলার তারিখ আসে আর যায়। কোনো কাজ হয় না। উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে র‌্যাবকে একটা সময় বেঁধে দিক। র‌্যাব যদি রহস্য উদঘাটন করতে না পারে তাহলে ব্যর্থতা স্বীকার করে মামলা ছেড়ে দিক। অন্য কোনো সংস্থা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সালেহা মনির বলেন, মুজিববর্ষে অনেক কিছু হচ্ছে। মুজিববর্ষে সাগর-রুনি হত্যার সুরাহা করতে পারলে এটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।  

সালেহা মনির বলেন, সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কবরের পাশে গিয়ে কী বলবো, বিচার হচ্ছে না। তবে বিচার একদিন হবেই। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আমি সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে যাবো। দুনিয়ার বিচার না হলেও উপরে যিনি আছেন তিনি অবশ্যই বিচার করবেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।

দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। সেই থেকে নয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।  

এদিকে প্রতিবারের মতো সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সমাবেশ করার কথা রয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরই)।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
কেআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।