ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

টাকা আত্মসাতের দায়ে কোর্ট উপ পরিদর্শকের কারাদণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
টাকা আত্মসাতের দায়ে কোর্ট উপ পরিদর্শকের কারাদণ্ড দণ্ডপ্রাপ্ত মোস্তফা হাওলাদার। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় আদালত অঙ্গনে দায়িত্ব পালনকালে সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে কোর্ট উপ পরিদর্শক (সিএসআই) মোস্তফা হাওলাদার নামে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৭০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

এসময় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একই মামলার অপর আসামি কোর্ট ইন্সপেক্টর কায়েম উদ্দিনকে বে-কসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন- ভোলা জেলার আলগী গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের ছেলে এবং ঘটনার সময় ২০১০ সালের ০৮ মার্চ তারিখে কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় দায়িত্বরত সিনিয়র পুলিশ উপ পরিদর্শক মো. মোস্তফা হাওলাদার। তিনি বর্তমানে ২ বছর ধরে চাকরি থেকে অবসরে রয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে পুলিশের চাকরি সূত্রে মোস্তফা হাওলাদার কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় সিনিয়র পুলিশ উপ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এসময় দুইটি মামলা নিষ্পত্তি অন্তে আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানার টাকা যথাক্রমে ৪৩ হাজার এবং ২০ হাজার ২শ টাকা আদায় করেন। নিয়মানুযায়ী সরকারি কোষাগারের এই টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়ার দায়িত্ব ছিলো মোস্তফা হাওলাদারের উপর।

তিনি টাকা জমা দিয়েছেন ঠিকই তবে ৪৩ হাজারের স্থলে ৩ হাজার এবং ২০হাজার ২শ টাকার স্থলে ২শ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করেন। সেইসঙ্গে জমা দেওয়া ওই ট্রেজারি চালানের কপিতে ঘষামাজা করে ৩ হাজারকে ৪৩ হাজার এবং ২শ টাকাকে ২০ হাজার ২শ টাকা দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেন।

বিষয়টি পরবর্তীতে নিরীক্ষায় ধরা পড়লে আদালত তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন পুলিশ সুপারকে।

আদালতের আদেশে তৎকালীন কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু নানাভাবে আইনে ফাঁকফোকর গলিয়ে সেই যাত্রায় মোস্তফা হাওলাদার পার পেয়ে যান।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় দুদকের উপরে তদন্তসহ মামলা দায়েরের আদেশ দিলে দুদক মামলাটির তদন্ত করেন। দুদকের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সরকারি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সাহার আলী বাদী হয়ে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া সদর থানায় কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. কায়েম উদ্দিন এবং সিনিয়র কোর্ট উপ পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে দুদক ২০১১ সালের এপ্রিলে চার্জশিট দেয় আদালতে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আল মুজাহিদ ইসলাম মিঠু জানান, এই মামলার ঘটনাটি হয়ত বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছোট, কিন্তু এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- সরকারি দপ্তরগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে এরা নানাভাবে অনিয়ম দুর্নীতিও করে যাচ্ছে আবার আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে কিভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে তারই একটা বিশ্লেষন ধর্মী মামলার উদাহরণ এটি।  

দুদক এই মামলার মধ্যদিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, অপরাধী যেই হোক, শনাক্ত হয়ে গেলে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কুষ্টিয়ায় আদালত অঙ্গনে দায়িত্ব পালনকালে এই মামলার আসামি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা হাওলাদার পুলিশের করা তদন্তে বেরিয়ে গেলেও দুদকের দেওয়া চার্জশিটে দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে আদালত দুইটি মামলার মধ্যে একটিতে ১ বছর ও অপরটিতে ২ বছর কারাদণ্ডসহ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে অপর আসামি কোর্ট ইন্সপেক্টর কায়েম উদ্দিনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।