ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীতে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার এক গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গিয়ে নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি সঞ্জু শিকদারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (২ জুন) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সোনাগাজী পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির খোকন মিয়ার মালিকানাধীন রহিমা সুন্দরীর ভাড়া বাসায় ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে গণধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। এসময় দুর্বৃত্তরা তার সঙ্গে থাকা এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়।
পরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে সঞ্জু শিকদার, রহিমা সুন্দরী ও আফলাছ হোসেনসহ ৩ জনের নামোল্লেখ করে এবং আরও ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে সঞ্জু শিকদার (৩৫) ও নারী প্রতারক রহিমা সুন্দরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ, এলাকাবাসী এবং নির্যাতিত গৃহবধূর স্বজনরা জানান, আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন ওই নারীকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করেন। উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারী গ্রামের রিপন নামে এক যুবলীগ কর্মীর কাছে ১৪ বছর আগে তাকে বিয়ে দেন সাহাব উদ্দিন। ৩ বছর আগে আধিপত্যের জের ধরে সন্ত্রাসীরা রিপনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে ওই নারী তার ১৩ বছর ও ৭ বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে পালক বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
নিঃসন্তান পালক বাবা ওই নারীর নামে বসতবাড়ি জমিদান করার প্রস্তাব করেন। এ খবর জানাজানি হলে সাহাব উদ্দিনের ভাই ও ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাহাব উদ্দিন ও তার স্ত্রী রোশনা খাতুন এবং তাদের পালিত মেয়েকে পিটিয়ে আহত করেন সাহাব উদ্দিনের ভাই কালা মিয়া ও তার ছেলে মাসুদসহ কয়েকজন।
ওই নারী সেদিনই বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দিয়ে বের হওয়ার সময় থানার মাঠে ওই নারীর সঙ্গে পরিচিত হন প্রতারক রহিমা সুন্দরী। তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে বোন ডেকে জানান, পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এদিকে বাড়ির চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের ভয়ে ওই নারী পালক বাবার বাড়িতেও যেতে পারছিলেন না।
এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১২টার দিকে সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ ৫ জন যুবককে পুলিশের লোক বলে তার ওপর লেলিয়ে দেন রহিমা। ওই অসহায় নারীকে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, ৮ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা।
সকালে জ্ঞান ফিরলে রহিমার কাছে এ নির্যাতনের কারণ জানতে চান সেই নারী। তখন সঞ্জু শিকদার ও আফলাছ নামের দুই যুবককে এনে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করান রহিমা। তারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করারও হুমকি দেন ওই নারীকে।
ওই নারী সমাজের লোকদের জানালে কেউ দায়িত্ব না নেওয়ায় এক পর্যায়ে সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের দ্বারস্থ হন তিনি। তারা ঘটনার দু’দিন পর মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে নিয়ে যান তাকে। বিষয়টি অবগত হয়ে ওসি তাৎক্ষণিক মামলাটি দায়ের করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে সঞ্জু শিকদার ও রহিমা সুন্দরীকে আটক করে পুলিশ।
সঞ্জু শিকদার দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে। তিনি সোনাগাজী পৌরসভার চরগণেশ গ্রামের রেহানার বাড়িতে বসবাস করছিলেন। একসময় তিনি সোনাগাজী বাজারে মুচির কাজ করতেন। পরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে যান।
** নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২১
ইএস/ওএইচ/